নারীর অশ্রু পুরুষদের আগ্রাসন কমানোর ক্ষমতা রাখে।

নারীর কান্না পুরুষের ক্রোধ নিয়ন্ত্রন করে

জানুয়ারি ২, ২০২৪

কান্না কি কেবলই বিবর্তনের এক নৈমত্তিক ফলাফল মাত্র? চার্লস ডারউইন তো সেরকমই মনে করতেন। কিন্তু সম্প্রতি একদল গবেষক আবিষ্কার করেছেন যে নারীর অশ্রু পুরুষের রাগ দমনে দারুণ ক্ষমতা রাখে। গবেষনায় উঠে এসেছে কান্নার মাধ্যমে মানুষ একে অপরের কাছে রাসায়নিক বার্তা পাঠায়। যার ফলে সামাজিক যোগাযোগ স্থাপনে কান্না গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মানুষ আর সব স্থলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতো, শরীরের গন্ধে অর্থপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করে যা আচরণকে প্রভাবিত করে। ইঁদুর সাধারণত কান্না দিয়ে ভাব আদান প্রদান করে। কিন্তু আমাদের নাকের গন্ধ নেয়ার ক্ষমতা তাদের মতো না। মানুষের দেহেও এমন কোন ব্যবস্থা আছে কিনা তা জানার উদ্দেশ্যে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়।  

গবেষনায় দেখা গেছে, নারীর অশ্রুতে কিছু রাসায়নিক থাকে, যা পুরুষের ক্রোধ ও আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে। গবেষকরা  তিনটি পরীক্ষা করেছেন যাতে বোঝা যায় নারীর কান্না কিভাবে পুরুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে।

প্লস বায়োলজিতে প্রকাশিত এই গবেষণায়  ৩১ জন সুস্থ পুরুষ অংশগ্রহণ করে। সেখানে প্রথমে ৬ জন নারীর চোখের পানি সংগ্রহ করা হয়। কষ্টের মুভি দেখার সময় সংগ্রহকৃত তাদের অশ্রু পরীক্ষায় প্রধান উদ্দীপনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। সাথে আরেকটি লবণাক্ত দ্রবণ সংগ্রহ করা হয়েছিল। কান্নার মতো দেখতে লবনাক্ত দ্রবণটির গন্ধ একই রকম ছিল।

এরপর পুরুষ অংশগ্রহণকারীদের  অন্ধকার একটি  সেটআপের মধ্যে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাদের কান্না বা লবণাক্ত দ্রবণের মধ্যে যেকোন একটির সংস্পর্শে নিয়ে আসা হয়। এখানে গবেষক এবং অংশগ্রহণকারীর কেউ আগে থেকে নিশ্চিত ছিল না যে কার কাছে কোন ধরণের দ্রবন নিচ্ছে।  

ক্রোধের মাত্রা পরিমাপ করার জন্য গবেষকরা তাদের নিয়ে একটি গেম খেলেন যেখানে পুরুষদেরকে অর্থনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়। পরীক্ষা চলাকালীন, অংশগ্রহণকারীদের নারীর অশ্রু এবং লবণাক্ত দ্রবণের গন্ধ শুঁকানো হয়।

ফলাফলে দেখা যায়,  যেসকল পুরুষ কান্নার  সংস্পর্শে  ছিলেন তাদের  ক্রোধের মাত্রা সাধারন লবনাক্ত দ্রবনের  সংস্পর্শে থাকা পুরুষদের চেয়ে ৪৩.৭% কম ছিল।

দ্বিতীয় পরীক্ষায়, গবেষকরা মানুষের নাকের রিসেপ্টরগুলি কীভাবে এই কান্নার সংকেত শনাক্ত করে তা পরীক্ষা করে। সেখানে লক্ষ্য করা যায় যে ৬২টি রিসেপ্টরের মধ্য থেকে চারটি কান্নায় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এই রিসেপ্টরগুলি লবণাক্ত দ্রবণে কোন প্রকার সাড়া দেয়নি।

তৃতীয় পরীক্ষায় ৩৩ জন পুরুষ অংশগ্রহণ করে। যেখানে কান্না এবং লবণাক্ত দ্রবণের গন্ধ শুঁকিয়ে তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম দেখার জন্য একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। আগের পরীক্ষার মতোই তাদের ক্রোধের মাত্রা মাপার জন্য একটা গেম খেলা হয়। কিন্তু এবার তাদের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করছে সেটা দেখা হয়। এই পরীক্ষণে দেখা গেছে কান্নার গন্ধ শুঁকলে, গন্ধ বোঝার এবং  ক্রোধের সাথে সম্পর্কিত মস্তিষ্কের অংশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়ে।

এই ফলাফল থেকে বোঝা যায় যে নারীর কান্না সামাজিক যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে পুরুষের রাগ নিয়ন্ত্রন করতে। অর্থাৎ, মানুষ কাঁদলে তা অন্যজনের আচরণের উপর প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে কাছের মানুষের।

এই ফলাফলগুলি সত্ত্বেও, গবেষণায় এখনও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন ঘ্রাণজনিত রিসেপ্টরগুলির আংশিক পরীক্ষা এবং পুরুষ অংশগ্রহণকারীদের উপর একচেটিয়া ফোকাস। ভবিষ্যতে গবেষণার লক্ষ্য হল ঘ্রাণজনিত রিসেপ্টরগুলি আরও ব্যাপকভাবে অন্বেষণ করা, মহিলাদের উপর অশ্রুর প্রভাব পরীক্ষা করা এবং অশ্রুতে সক্রিয় অণুগুলির উন্মোচন করা। এখন গবেষকরা জানতে চান, কান্নায় ঠিক কোন ধরণের  রাসায়নিক পদার্থগুলো আছে, যেগুলো ক্রোধ কমায়? এই পদার্থগুলো খুঁজে পেলে মানসিক চিকিৎসা, ওষুধ তৈরি ও প্রয়োগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে অনেক সমাধান বেরিয়ে আসবে।


ইমরান হোসেন, নিলীম আহসান

টেকমরিচ

Reference:

Agron, S., Claire, Reut Weissgross, Mishor, E., Lior Gorodisky, Weiss, T., Furman‐Haran, E., Matsunami, H., & Sobel, N. (2023). A chemical signal in human female tears lowers aggression in males. PLOS Biology, 21(12), e3002442–e3002442. https://doi.org/10.1371/journal.pbio.3002442