প্রশ্নটা শুনে অনেকেই হয়ত ভ্রুঁ কুঁচকে ফেলেছেন। ভাবছেন এটাও কি সম্ভব? চারিদিকে যেখানে রীতিমত ওয়েব ডিজাইনের ছড়াছড়ি, সেখানে বলা হচ্ছে ওয়েব ডিজাইন ক্যারিয়ার হুমকির মুখে! হ্যা, ঠিকই শুনেছেন। শুনতে একটু অন্যরকম লাগলেও প্রযুক্তির দিনবদলের হাওয়ায় এখন ওয়েব প্রফেশনালদের কাজের ধরন থেকে শুরু করে ডেজিগনেশন অবধি অনেক পরিবর্তন চলছে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞগণ এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন। সেগুলো নিয়ে কিছু সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
ওয়েব টেমপ্লেটের প্রাচুর্যতাঃ বর্তমানে বাজারে প্রচুর ফ্রি টেমপ্লেট এখন পাওয়া যায়। অথবা একবার একটা টেমপ্লেট একটু বেশি দামে কিনে নিয়ে সেটা প্রায় যে কোন ধরণের সাইটের জন্য প্রস্তুত করে নেয়া যায়। তাই ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে খুব বেশি জ্ঞান না থাকলেও যে কেউ চাইলে নিজের ওয়েব সাইট নিজেই ডিজাইন করতে পারে। এছাড়াও এখন জুমলা, ওয়ার্ডপ্রেস, ড্রুপাল ইত্যাদি ওপেনসোর্স ফ্রেমওয়ার্ক পাওয়া যায়। যা দিয়ে স্বল্প প্রোগ্রামিং জ্ঞানেও নিজের প্রয়োজন অনুসারে সাইট ডিজাইন করা সম্ভব। তাই অনেকেই এখন শুধু ওয়েব ডিজাইনের জন্য ডেভেলপার হায়ার করতে আগ্রহী হন না।
ফেসবুকের পেজের উত্থানঃ প্রায় সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই ফেসবুকে তাদের একটা অফিসিয়াল পেজ খুলে থাকে। এর মাধ্যমে তারা ইউজারদের অনেক কাছাকাছি গিয়ে পণ্যের প্রমোশন করতে পারে। ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া জানতে পারে। প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটের চেয়ে তাদের ফেসবুক পেজই বেশি ভিজিট হয়। তাই ওয়েবসাইটের চেয়ে তারা ফেসবুকের পেজকেই বেশী গুরুত্ব দেয়। ওয়েব ডিজাইনের জনপ্রিয়তা কমার এটা আরেকটা কারণ।
মোবাইল এপ্লিকেশনের ব্যবহারঃ মোবাইল ডিভাইসের সাহায্যেই ইউজাররা বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আর ইউজারের সুবিধার কথা চিন্তা করে সব বড় বড় সার্ভিসগুলোই এখন মোবাইল এপ্লিকেশনের মাধ্যমে পাওয়া যায়। যেমনঃ ফেসবুক, জিমেইল, ইয়াহু, বিবিসি, ম্যাশেবল ইত্যাদি সব জায়ান্ট সাইটগুলো তাদের মোবাইল এপ্লিকেশন ভার্সন ছেড়েছে। যার মাধ্যমে সাইটগুলোর আপডেট নিউজ প্রতিনিয়ত ইউজারের মোবাইলে নোটিফিকেশন আকারে পাওয়া যায়। তাই ইউজারকে প্রতিদিন ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হচ্ছে না। এভাবে ব্যবহারকারীর একটা বড় অংশই ওয়েবসাইট ব্রাউজ করা কমিয়ে দিয়েছে।
সময় এখন ইউজার সেন্ট্রিক ডিজাইনেরঃ এখন জয়জয়কার ইউজার সেন্ট্রিক ডিজাইনের।যার জন্য ডিজাইন করা সেই মুল্যবান ইউজারের মন রক্ষা করে চলাটাই এখন সবার লক্ষ্য। আর তাই, ইউএক্স না বুঝে ডিজাইন করাটা অর্থহীন। ইতিমিধ্যেই ওয়েব ডিজাইন শব্দটির জায়গায় দখল করে নিয়েছে “ইউএক্স ডিজাইন”। গুগল এবং অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনগুলো এখন তাদের সাইট র্যাংকিং এর ক্ষেত্রে ইউ এক্সকে প্রাধান্য দিচ্ছে। ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ছাড়া এখন কোন পণ্য বা ওয়েবসাইটের কথা চিন্তাও করা যায় না। এতদিন পর্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হত ওয়েবসাইটের বাহ্যিক বা ইন্টারফেস এর দিক নিয়ে। কিন্তু এখন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এর ব্যবহারযোগ্যতা থেকে শুরু করে সামগ্রিক দিকগুলো নিয়ে। সাইটটা আদৌ ইউজারের প্রয়োজন মেটাতে পারছে কিনা সেদিকে নজর রাখাই হচ্ছে ইউএক্স ডিজাইনারের কাজ।
করনীয় : ওয়েব ডিজাইনাররা কি ভেবে ভেবে মাথার সব চুল ছিঁড়ে ফেলছেন? ভাবনার কিছু নেই। প্রযুক্তি মানেই সবসময় পরিবর্তনশীল। আপনিও দ্রুত আপডেট করে ফেলুন নিজেকে ইউএক্স ডিজাইনার এ। আর এটা আপনার জন্য খুব’ই সহজ। কারন ইউএক্স ডিজাইনার হবার জন্য আপনার পথটি এখনও অনেক মসৃন।
আরো পড়ুন: কিভাবে ওয়েব ডিজাইনার থেকে ইউএক্স ডিজাইনার হিসেবে রুপান্তরিত হবেন।
টেক এনালিস্ট – টেকমরিচ