গুগলের বয়স যখন মাত্র কয়েক বছর তখন তারা তাদের ১০টি মূলনীতি তৈরি করে। যার প্রথমটি ছিল ‘ইউজাররাই হবে আমাদের মূল ফোকাস’। কেননা ইউজার বা ব্যবহারকারীর চাহিদা পূরণ করতে পারলেই শুধুমাত্র ব্যবসায়িক সাফল্য আসা সম্ভব।
একটা সময়ে ডেভেলপাররা তাদের সাইটকে গুগল র্যাংকিং এ প্রথমের দিকে রাখতে শুধুমাত্র SEO এর উপর নির্ভর করত। সেই তুলনায় UX এর উপর ততটা জোর তারা দেয় নি। কিন্তু UX এর ব্যাপারে এখন সব থেকে বেশি জোর দিচ্ছে গুগল নিজেই। এ জন্য একজন ডেভেলপারকে SEO এর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সাইটের বা ওয়েব এপ্লিকেশনের UX এর উপরে। শুধু SEO বা শুধু UX নয়, বরং একটা সাইটকে ভাল অবস্থানে নিয়ে যেতে এই দুইটিই একটি অপরটির পরিপূরক। SEO আর UX এর সমন্বয়ই একটা সাইটকে গুগল র্যাংকের শীর্ষে নিয়ে আসে। আর এই দুইটি ব্যাপারকে একত্রে বলা হয় SXO (Search Experience Optimization). ভবিষ্যতে SXO-ই হবে গুগলের সাইট র্যাংকিং এর একমাত্র উপায়। কারণ SXO এর মাধ্যমেই ইউজারের খুব কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব।
গুগলের নতুন নীতির প্রতিফলন ঘটাতে সম্প্রতি বাংলাদেশে SXO এর চর্চা শুরু হয়েছে। আশা করা যায় আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বাংলাদেশের ডেভেলপাররা তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করতে সক্ষম হবে। স্বল্প পরিসরে হলেও বিভিন্ন ওয়ার্কশপ-সেমিনার হচ্ছে সার্চ এক্সপেরিয়েন্স অপটিমাইজেশনের উপর। ইউজার এক্সপেরিয়েন্সের উপর গবেষণা, সমাধান ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছে User Study & Experience Research Hub (Userhub). UX বা SXO এর ক্ষেত্রে নতুনদের জন্য ইউজার হাবের রয়েছে USER EXPERIENCE DESIGN FOUNDATION (UXDF) ট্রেনিং প্রোগ্রাম। আর এডভান্স লেভেলের জন্য আছে CERTIFIED USER EXPERIENCE PROFESSIONAL (CUXP). UX নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশে এই একটি প্রতিষ্ঠানই সেবা দিচ্ছে।
নিচে SXO এর সাথে সম্পর্কিত কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হল যেগুলো আপনার সাইটকে বেশি ভিজিটর দিতে পারে ও র্যাংকিং এ এনে দিতে পারে প্রথম দিকে।
সাইট ডিজাইন করুন ইউজারের জন্য, গুগলের জন্য নয়। ইউজারকে উদ্দেশ্য করেই সাইটকে সাজান, গুগলকে উদ্দেশ্য করে নয়। কারণ ইউজাররাই আপনার ভোক্তা। তাদের কথা মাথায় রেখে, তাদের ভাল লাগা, মন্দ লাগার বিচার করেই ডিজাইন করুন সাইট। গুগল আপনার সাইটকে ইউজারের সামনে এনে দিবে মাত্র। তাই শুধুমাত্র গুগলের কথা মাথায় না রেখে ইউজারের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করুন। আপনি যদি ইউজার এক্সপেরিয়েন্স বুঝে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন গুগল আপনা আপনিই আপনার সাইটকে ইউজারের কাছে পৌঁছে দিবে। ব্যবহারকারীর পছন্দের রঙ, তাদের পছন্দের টেক্সট কালার, টেক্সটের সাইজ ইত্যাদির উপরেও নির্ভর করে আপনার সাইটের ভিজিটর পাওয়ার সংখ্যা। সাইটটি যদি সহজে ব্যবহার করা যায় বা সাইটের লেখাগুলো যদি পড়তে সহজ হয় তাহলে খুব দ্রুতই সাইটের ব্যবহারকারী বাড়বে।
ওয়েবসাইটটি হতে হবে মোবাইল ফোন বা রেসপন্সিভ। যেন যে কোন ধরনের মোবাইল ফোন বা ট্যাবলেট থেকে সাইটটি সহজেই ভিজিট করা যায়। বর্তমান সময়ে সব থেকে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয় মোবাইল ফোন থেকে। একটা গবেষণায় উঠে এসেছে যে আমেরিকা সহ মোট ১০টি দেশে কম্পিউটারের তুলনায় মোবাইল ফোন থেকেই বেশি পরিমাণে গুগলে সার্চ দেয়া হয়। তাই চলতি বছরে গুগল তাদের র্যাংকিং এর ক্ষেত্রে কিছু নীতিগত পরিবর্তন এনেছে। এমন সাইটগুলোই এখন থেকে বেশি গুরুত্ব পাবে যেগুলো সহজে মোবাইল ডিভাইস থেকে পড়ার উপযোগী। অর্থাৎ আপনার সাইটটি দাঁড় করাতে হবে সব ধরনের ইউজারের কথা মাথায় রেখে। এ জন্য পর্যাপ্ত UX রিসার্চের মাধ্যমে বের করতে হবে একজন ইউজার তার ফোনে বা ট্যাবলেটে কি ধরণের সাইট ভিজিট করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়া এই মোবাইল ফোনের উপযোগী রেসপন্সিভ ডিজাইন হলেই শুধু হবে না, হতে হবে একে ইউজার ফ্রেন্ডলি বা ব্যবহারকারী বান্ধব। UX এর ভাষায় সাইটটিকে হতে হবে usable বা ব্যবহারযোগ্য।
ব্যবহার করুন প্রাসঙ্গিক ছবি। ওয়েবসাইটে প্রয়োজন অনুসারে ছবি দেয়া হলে সহজেই ইউজাররা আকৃষ্ট হয়। একটা ছবি অনেক বেশি লেখার কাজ নিজেই করতে পারে। একটা সাধারন কথা ছবি ছাড়া বোঝাতে অনেক বেশি লেখার দরকার হয়, কিন্তু সাথে একটা প্রাসঙ্গিক ছবি জুড়ে দিলে ইউজাররা খুব সহজেই ব্যাপারটা ধরতে পারে। তাই আপনার সাইটের কনটেন্টের সাথে ইউজারের চাহিদা অনুযায়ী ছবি-গ্রাফ ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে খুব বেশি বড় সাইজের ছবি দেয়া উচিত না। এতে সাইটটা লোড হতে বেশি সময় নেয়। অনেক ক্ষেত্রে এটাও ভিজিটর হারানোর কারণ হতে পারে। ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হয়ঃ
• ছবির একটি উপযুক্ত নাম দেয়া
• মানানসই অল্টার টেক্সট ব্যবহার করা (অর্থাৎ ছবির উপর কার্সর রাখলে যেই লেখাটা দেখা যাবে)
• ছবির সাথে প্রাসঙ্গিক তথ্য উপস্থাপন করা
• কোন জরুরি তথ্য ছবি দিয়ে ঢেকে না দেয়া
যেহেতু গুগলে ছবি সার্চ করার সুযোগ রয়েছে তাই ভিজিটর পাওয়ার অন্যতম একটা মাধ্যম হতে পারে সাইটের প্রাসঙ্গিক ছবির ব্যবহার।
সাইটের রেজিস্ট্রেশন ফর্ম যতটা সম্ভব ছোট রাখুন। এমন তথ্যই সেখানে চাওয়া উচিত যেগুলো আসলেই দরকার। বেশি স্ক্রল করে বা পরের পেজে গিয়ে ফর্ম পূরণ করতে ইউজাররা বিরক্ত হন। ইউজারদের সুবিধার্তে একটা প্রোগ্রেস বার রাখা যেতে পারে যেখানে সে দেখতে পারে তার রেজিস্ট্রেশনের কাজ কতখানি শেষ হয়েছে আর কতটুকুই বা বাকি আছে। এটা আপনার সাইটকে করতে পারে আরো বেশি স্মার্ট!
Infinite scroll এর জন্য চাই বাড়তি সতর্কতা। কারণ খুব বেশি স্ক্রল করতে ইউজার স্বাভাবিক ভাবেই বিরক্ত হন। আপনার সাইটটিতে যদি অনেক বেশি ইনফরমেশন থাকে তাহলে হয়ত infinite scroll দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তাই যেসব সাইট বা পেজে অনেক বেশি স্ক্রল করতে হয় সেখানে ইউএক্সের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। নিতে হবে একটু বাড়তি সতর্কতা। এ ধরনের ক্রলিং এর ক্ষেত্রে pagination ফিচারটা ব্যবহার করে infinite scrolling-টা বাদ দেয়া যায়।
Tech Analyst – Techmorich