বাংলাদেশের তরুন প্রযুক্তিবিদ জোসেফ রোজারিও টনি এবং তার টিম ব্লাড ডোনেশন নিয়ে তৈরি করেছে চমৎকার অ্যাপ্লিকেশন ‘সেতু’। যার মাধ্যমে খুব সহজেই রক্তদাতা ও রক্ত গ্রহীতা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।
এই অ্যাপ্লিকেশনটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় Science and Technology ইনোভেশন প্রতিযোগিতাতে (Global Innovation through Science and Technology) ১০২টি দেশ থেকে আসা ১০৭৫ টি প্রজেক্টের মধ্যে সেমেফিনাল রাউন্ডের জন্য নির্বাচিত হয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। এখন চলছে ভোটিং। আমাদের সবার ভোটই, ফাইনাল রাউন্ডের জন্য নির্বাচিত করবে সেরা ৩০টি প্রজেক্ট। আমারই পারি সেতুকে ভোট দিয়ে ফাইনাল রাউন্ডে পৌঁছে দিতে।
এবার সুযোগ এলো মেডিকেল প্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে প্রমাণ করার। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আরেকটি সুযোগ এসেছে!
কে না চায় তার দেশকে বিশ্বের বুকে অন্যতম হিসেবে দেখতে??? আমি, আপনি বা অন্য কোন বাংলাদেশী? সবাই চায় তার দেশকে ভালবাসতে, দেশের মান-মর্যাদা বাড়াতে, দেশে আন্তর্জাতিক গৌরব নিয়ে আনতে, দেশের নাম বিশ্বের বুকে উজ্জ্বল করতে, নিজের দেশকে বিশ্বের অন্যতম দেশ হিসেবে দেখতে।
দেশের নাম উজ্জ্বল করতে সবাই চায় কিন্তু সবার কি সেই সুযোগ হয়??? আপনি বা আমি কি ইচ্ছা করলেই বিল-গেটস, মার্ক-জুকার বার্গ , স্টিভ জবস এর মত কিছু করতে পারবো??? হ্যা, হয়তো আমরা পারবো কিন্তু সবার দ্বারা তা হয়ে উঠবে না। কিছু কিছু মানুষ ই তা পারবে।
তবে হ্যা, আমরা সবাই নতুন কিছু করে দেশের নাম উজ্জ্বল না করতে পারলেও , যদিআমরা সবাই একসাথে বড় হয়ে ওঠা কোন একটা কাজ কে সাপোর্ট দিয়ে বিশ্বের সবার পলক ফেরাতে পারি আমাদের দেশের দিকে, তাহলেই হয়তো আমাদের অবদানও থাকবে সে কাজের মধ্যে। বিশ্বের সবাই জানতে পারবে আমাদের ঐক্যতা সম্পর্কে, আন্তরিকতা সম্পর্কে, প্রযুক্তি সম্পর্কে এবং ভালবাসা সম্পর্কে।
তেমন ই একটা কাজে যদি আমরা সবাই এক হতে পারি তাহলেই সম্ভব বিশ্বের বুকে আমাদের নাম উজ্জ্বল করতে। আর এমন ই একটা কাজ করেছেন আমাদের বাংলাদেশের কিছু প্রযুক্তি প্রেমিরা। তারা আমাদের দেশের নাম উজ্জ্বল করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়। তারা আমাদের দেশের মেডিকেল খাতে অনন্য অবদান রাখতে এবং রক্তের অভাবে যাতে কাউকে মারা যেতে না হয়, সেই আলোকে রিসার্চ করে উদ্ভাবন করেছেন এক অসাধারণ আইডিয়া। যা এখন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সেমি-ফাইনালে অবস্থান করছে।
কি সেই আইডিয়া ???
আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, সারা বিশ্বে প্রতি বছর অর্ধ মিলিয়ন বা ৫ লক্ষের অধিক মানুষ মারা যায় শুধু রক্তক্ষরণ (Bleeding) হয়ে। এর মধ্যে ১৫% এর অধিক মানুষ মারা যায় সময়মত রক্ত না পাওয়ার কারণে। আমাদের দেশে বর্তমানে অনেক ধরনের রক্ত প্রদানকারী সংস্থা রয়েছে। কিন্তু যোগাযোগের অভাব এবং আধুনিকায়ন (প্রযুক্তিগত উন্নতি) না থাকার কারণে সঠিক সময়ে রক্ত তাদের কাছ থেকে গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
আর তাছাড়া আমাদের দেশে রক্ত প্রদানকারী যে সকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের রক্তের ৪৭% রক্ত সংরক্ষণ করা হয় প্রফেশনাল রক্তদানকারী (রক্ত-বিক্রয় করা যাদের পেশা) থেকে । যাদের রক্তে HIV, Ag+VE ইত্যাদী ভাইরাস থাকা অসম্ভব কিছুই নয়। ২৭% সংরক্ষণ করা হয় ফ্যামিলি মেম্বারদের কাছ থেকে যারা তাদের ফ্যামিলি মেম্বারদের রক্তদান করে। অর্থাৎ তাদের রক্ত সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায়। আর অবশিষ্ট্য ২৬% সংরক্ষণ করা হয় স্বেচ্ছায় রক্তদানকারীদের থেকে। অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারি যে, ৪৭% রক্তের মধ্যে ভাইরাস থাকার সম্ভাবনা থাকে আর ২৭% রক্ত সাথে সাথে শেষ হয়ে যায়। অবশিষ্ট্য ২৬% বিশুদ্ধ রক্ত দিয়ে কি আমাদের দেশের মানুষের রক্তের অভাবে অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব??? অবশ্যই না। আর যোগাযোগের সমস্য তো আছেই।
এই ধরনের সমস্যার একটা অধুনিক সমাধান উদ্ভাবন করেছেন আমাদের দেশের কিছু প্রযুক্তি প্রেমিরা। আর সেই উদ্ভাবনের নাম হচ্ছে মোবাইল অ্যাপ “SHETU”। সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশও প্রযুক্তিতে অনেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে । বিশেষ করে যোগযোগ ব্যাবস্থার। বর্তমানে প্রায় অধিকাংশ মানুষAndroid, iPhone ইত্যাদী Operating system based মোবাইল ব্যাবহার করে থাকে। যার কারণে “SHETU” এর প্রাথমিক যোগাযোগ ব্যাবস্থা হবে মোবাইল অ্যাপ ব্যাবহার করার মাধ্যমে।
“SHETU” র বৈশিষ্ট্য –
”SHETU” একটা মোবাইল অ্যাপ নির্ভর সমাধান। যে কেউ এই অ্যাপ ব্যাবহার করার মাধ্যমে তাৎক্ষণাৎ রক্ত সংগ্রহ করতে পারবে । এই অ্যাপের বিশেষ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছেঃ-
১. এই অ্যাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার করা যাবে। যার ফলে রক্তদাতা ও রক্তগ্রহিতা কে সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে। যে কোন সময় ম্যাসেজ করার মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাবে।
২. যারা রক্ত প্রদান করবে তাদেরকে রক্ত প্রদানে আরো উৎসাহি করে তোলার জন্য “SHETU” তে রয়েছে পুরস্কার প্রদান কার্যক্রম।
৩. ”SHETU” অ্যাপ এর ব্যাবহারকারীদের প্রোফাইল তাদের রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী সাজানো থাকবে। যার ফলে রক্তের চাহিদা অনুযায়ী নিকটস্থ রক্তদাতা কে খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। আর তাছাড়া প্রত্যেকের প্রোফাইলে AVAIBILITY দেওয়া থাকবে যে, সে রক্ত দিতে এই মুহুর্তে সক্ষম কিনা।
৪. এতে থাকবে স্বাস্থ্য ঠিক রাখার নিয়মিত টিপস প্রদান ব্যাবস্থা।
৫. সকল স্থানে রক্ত প্রদানের জন্য থাকবে জরুরী সার্ভিসের ব্যাবস্থা।
এছাড়াও এই অ্যাপে আপনাদের মতামত জানানোর সু-ব্যাবস্থা সহ রক্ত প্রদান ও রক্তদান করার জন্য সকল ধরনের সার্ভিস যুক্ত করা হয়েছে।
”SHETU” এর রর্তমান অবস্থান –
GIST Tech-I (Global Innovation in Science and Technology)নামের আন্তর্জাতিক একটা সংস্থা প্রতি বছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর নতুন আইডিয়ার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সেই অনুযায়ী এই বছর ও এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
এই বছর ১০৪ টি দেশের ১০৭৫ টি টিম তাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর আইডিয়া ও তার সমাধান জমা দিয়েছে। যার মধ্যে ৫১ টি দেশের ১০২ টিমের আইডিয়াকে তারা বাছাই করে সেমিফাইনালে প্রমোট করেছেন। এই টিম গুলো এখন ফাইনালে যাবার অপেক্ষায় আছে। ফাইনালে ৩০ টি টিমের আইডিয়াকে নেওয়া হবে। তবে এই রাউন্ড টা নির্ধারিত হবে জনগনের ভোটের মাধ্যমে। যার আইডিয়াতে যত বেশি ভোট পড়বে সেভাবে গনণা করে ৩০ টি টিম কে ফাইনাল এ নেওয়া হবে।
এই ১০২ টি টিমের মধ্যে আমাদের বাংলাদেশী প্রযুক্তি প্রেমিদের আইডিয়া “SHETU” কেও বাছাই করা হয়েছে। এই ভোটিং কার্যক্রম পহেলা এপ্রিল থেকে শুরু করে ১ মে পর্যন্ত চলবে।
এখানে ওয়েব সাইট টি ভিজিট করতে পারেন।
http://www.gistnetwork.org/
http://www.gistnetwork.org/node/3190
আমাদের অংশগ্রহণ “SHETU”কে পৌছে যেতে পারে বিশ্বের সেরা প্রযুক্তি লিস্টে –
আমাদের সকলের পক্ষে হয়তো নতুন কিছু প্রযুক্তি নির্ভর আবিস্কার করা সম্ভব না। তাই বলে কি আমরা আমাদের দেশকে পিছিয়ে যেতে দিব?? কখনোই না। এখন আমরাই পারি আমাদের দেশের মেধাবী প্রযুক্তিবিদদের আইডিয়াতে ভোট দিয়ে আবার আমাদের দেশেকে বিশ্বের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে।
আমরা প্রমাণ করতে পারি যে, আমাদের দেশ ছোট হতে পারে তবে প্রযুক্তিতে আমারা পিছিয়ে নেই। এটাই সময়, আমাদেরকে আরেকবার জাগিয়ে তোলার। আমরা বিশ্বের বুকে আমাদেরকে প্রমাণ করার জন্য সুন্দরবনকে ভোট দিয়েছি, ক্যাম্পেইন করেছি, মানুষকে সচেতন করেছি, আমাদের ঐক্যর পরিচয় দিয়েছি বিশ্বের কাছে এবং সেই সাথে আমাদের দেশের নাম কে করেছি উজ্জ্বল।
সেই সুযোগ আরো একবার আমাদের হাতে এসেছে, আমরা এইবার ও প্রমাণ করবো যে, আমরাই সেরা। বিশ্বের বুকে প্রযুক্তিতেও আমাদের নাম লিখাবো। আর এটা করতে আমাদের করতে হবে ছোট একটি কাজ, তা হচ্ছে
আমাদেরকে “SHETU” কে প্রমোট করার জন্য একটি করে ভোট দিতে হবে অনলাইনে।
হয়তো আমাদের সকলে একেকটা ভোটই উজ্জ্বল করবে আমাদের দেশকে, দেশের মেধাকে। যদি সম্ভব হয়, তাহলে সকলেই আপনার মত করে “SHETU” র লেখালেখি করুন। দেখিয়ে দিন যে, আমরাই জয়ী।
ভোট দেওয়ার নিয়মাবলী –
”SHETU” কে কিভাবে ভোট দিবেন তা জানতে এইখানে প্রথমে দেখে আসুনঃ http://www.shetubd.com/voting-page.html
ভোট দেওয়ার জন্য আপনাকে এখানে যেতে হবেঃ
http://www.gistnetwork.org/content/tech-i-semi-finalists-voting
“SHETU”র ফেইসবুক পেইজ
https://www.facebook.com/shetuapp/?__mref=message_bubble
রক্তদান এবং মৃত্যু হারের তথ্যসূত্রঃ
http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2920470/
https://www.betterhealth.vic.gov.au/health/conditionsandtreatments/blood-donation
http://discovermagazine.com/2010/dec/01-beating-blood-loss
http://www.jica.go.jp/bangladesh/bangland/en/report/552.html
Tahmid Hasan – UX Designer and Content Writer