অতীতের যেমন কিছু কিছু পেশা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, তাদের জায়গায় তেমনি নতুন নতুন পেশার উদ্ভবও হয়েছে। ১৭৫০ সালের দিকে হস্তশিল্পীদের নিপুণতা যেমন ইংল্যান্ডের বানিজ্যে এক অপরিহার্য বিষয় বলে মনে করা হত, উনবিংশ শতাব্দীতে এসে শিল্প বিপ্লবের ফলে ফ্যাক্টরির মেশিনগুলোর হাতই সেই দক্ষতা কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু সাদা চোখে দেখলে এতে সমাজে খারাপের চেয়ে ভালর দিকটাই সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। AUTOR এর মতে “প্রযুক্তির এই উত্থান আমাদের সময়কে আগের চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান করে তুলেছে। এখন আমরা অনেক বেশি সামর্থ্যবান এবং সফল”।
এক কাপড় ধোয়ার জন্য যেখানে আমাদের আগে ঘণ্টাখানেক ব্যাপি এক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হত, সেখানে আমরা এখন সহজেই একটি বোতাম টিপেই ইলেকট্রিক ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধুতে পারি। আবার একদিকে পাওয়ার টুলস আমাদের কন্সট্রাকশনের কাজকে করেছে আগের তুলনায় অনেক সহজ অন্যদিকে কম্পিউটার আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে বসে ক্যলকুলেশন করার সময়ও বাঁচাচ্ছে অবিরত। এসবই প্রযুক্তির উৎকর্ষ যা আমরা প্রতিনিয়ত অনুভব করে যাচ্ছি। প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবনের বাড়িয়েছে মান তেমনি বাড়িয়েছে নিরাপত্তা। ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ডের Oxford Martin Program on Technology and Employment এর কো ডিরেক্টর CARL FREY এর মনে করেন “প্রযুক্তির এই সর্বোপরি উন্নয়নের জন্য আমাদের যে অনেক কাজ কমে জীবন যাত্রা সহজ হয়ে গিয়েছে, এজন্য আমাদের মনে প্রানে খুশি হওয়া উচিত”।
অতীতের সাথে এখনকার বর্তমানের মূল পার্থক্যটাই হল পরিবর্তনের গতিপথ। শিল্প বিপ্লবের পর হয়ত আমরা আর কখনই আমাদের সমাজ এবং কর্মজীবনে এতটা দ্রুত পরিবর্তন লক্ষ্য করিনি। যদিও এখনও হয়ত ঠিক বলার সময় হয়নি, তবুও হিসাব অনুযায়ী আমাদের কাজের সংস্থান আমাদের প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে পারেনি। জনসংখ্যার বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের কাজের ক্ষেত্রের বৃদ্ধির অনুপাত মোটেও আশানুরূপ নয়। এমনকি উন্নত দেশগুলোতেই কাজের হার ব্যাপক হারে কমে যাচ্ছে। FREY বলছেন, “ডিজিটাল অর্থনীতির এই যুগে মানুষের কর্মসংস্থান সরাসরি সৃষ্টি হয় না আর তাই লন্ডন, সান ফ্রান্সিসকো, নিউ ইয়র্ক কিংবা স্টকহোম এর মতন শহরের মানুষগুলো ক্রমাগত কাজের খোঁজে নতুন নতুন জায়গায় ছুটছে”।
মধ্যবিত্ত কর্মজীবী মানুষগুলো যারা হয়ত একসময় ট্রাভেল এজেন্ট, টেলিফোন অপারেটর, ফটো ল্যাব টেকনিশিয়ান কিংবা বুক বাইন্ডিং এর কাজ করত তারাই আজ অর্থনীতির এই ব্যাপক পরিবর্তনের যুগে যথাযথ ট্রেনিং এর অভাবে রেস্টুরেন্টের ওয়েটার কিংবা ক্লিনারের কাজ নিয়ে নিম্নবিত্তে পরিনত হচ্ছে। “আমাদের এই ক্রম বর্ধমানশীল বৈচিত্র্যময় কর্মক্ষেত্রের যুগে সঠিক দক্ষ মানুষটি তৈরি করা দরকার কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সেদিকে কোন খেয়াল নেই”। বলছিলেন Center for Sensing and Mining the Future at the Boston Consulting Group এর ডিরেক্টর Alison Sandar.
AUTOR মনে করেন “একই সাথে সমাজে যেমন একদিকে কাজ জানা দক্ষ লোকদের চাহিদা পারদের মতন হু হু করে বেড়ে চলেছে, আবার অপরদিকে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত কিংবা মোটামুটি শিক্ষিত লোকেরা কাজের জন্য হন্য হয়ে ছুটছে”। এর অর্থ হল এক সময় যেমন মানুষ অল্প কাজ জানলেই সমাজে মধ্যবিত্তের জীবন যাপন করতে পারত! এখন আর সেই সুযোগটি নেই। আর তার উপরে সামনের সময়টিই আসছে এমন, যেখানে যেকাজে সামান্যতম ঝুকির সম্ভাবনা রয়েছে মনে করা হবে তা চলে যাবে স্বয়ংক্রিয় মেশিনের হাতে। আর সব মিলিয়ে এই মানুষের কাজের ক্ষেত্র এবং সুযোগের পরিধি আসতে আসতে ছোট হয়ে আসা শুরু করছে। হয়ত এমন দিন আসবে যখন ফাস্ট ফুড ওয়ার্কার থেকে শুরু করে শর্ট ফর্ম জারনালিসট এর কাজও মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়াই করা সম্ভব হবে।
অপরদিকে স্বয়ংক্রিয় এই প্রযুক্তির আবির্ভাবের ফলে যেখানে পূর্বে দক্ষ বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন ছিল, সেখানে আজকে তাদের প্রয়োজনীয়তা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। উধাহরনসরূপ এক্স রে এবং অন্যান্য মেডিকেল রেকর্ডস এখন কম্পিউটারের সাহায্যেই সহজেই নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা যায়। The Glass Cage Automation and US এর লেখক Nicolas Car বলছেন – “এখন থেকে যদি রেডিওলজিসটরা শুধুমাত্র কম্পিউটার থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বের হওয়া রিপোর্ট এবং সাজেশান এর উপর নির্ভর করতে থাকে তাহলে তাদের ব্যক্তিগত দক্ষতা আস্তে আস্তে কমে যাবে”। যার ফলাফলসরূপ কর্মক্ষেএের জায়গাটুকু ধীরে ধীরে আরও জটিল হয়ে যাবে এবং স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ধীরে ধীরে মানুষকে শুধুমাত্র কম্পিউটার অপারেটর এ পরিণত করবে।
পর্ব – ১
— চলবে —
Tech Ninja – Techmorich