২০১৬ এর সম্ভাব্য বৈপ্লবিক প্রযুক্তি ও যন্ত্র

January ১০, ২০১৬

মার্কিন পত্রিকা The WallStreet Journal এর মতে প্রচলিত ‘সায়েন্স ফিকশন’ ধারণা অনুযায়ী এবছর হয়ে উঠবে ‘সায়েন্স ফ্যাক্ট’! প্রযুক্তিগত উতকর্ষতার দিক দিয়ে  ২০১৬ সব কিছুকে ছাপিয়ে যেতে পারে বলে পত্রিকাটির অভিমত। ২০১৬ সালে কয়েকটি সম্ভাব্য বৈপ্লবিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রগুলো নিয়ে আমাদের এবারের প্রতিবেদন।

Virtual reality: মানুষ অনেক কিছুই কল্পনা করে, আর ভাবে, ‘ যদি সত্য হতো!’ মানুষের এমন কল্পনাকে বাস্তবতার সংস্পর্শ পাইয়ে দেয়ারই আয়োজন “ভার্চুয়াল রিয়েলিটি”। এ বছর অবশেষে ভার্চুয়াল বাস্তবতা ‘বাস্তব’ হয়ে  দেখা দিবে। বহু কাঙ্ক্ষিত অকুলাস রিফট হেডসেট আসছে এবার। এর পরেই আসছে এইচটিসি’র Vibe, সনি’র প্লে-স্টেশন ভিআর। অত্যাধুনিক সেন্সর ও ইমেজিং প্রযুক্তির এসব হেডসেট কানে দিলে মনে হবে কল্পনার জগতে আছেন। গেমস ও বিভিন্ন যুদ্ধ-লড়াইয়ের কাল্পনিক জগত্ হবে এ প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। এছাড়া ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও ও অ্যাপসের কারণে এ বছর কাল্পনিক বাস্তবতার অনেক কাছে চলে আসবে। মনে হবে সব টিকেট বিক্রি হয়ে যাওয়া কোন কনসার্টের একেবারে সামনের সারিতে আছেন, কিংবা ঘরে বসে উপস্থিত আছেন কোন মিটিং-এ!

Lenses and sensor camera: ছবির মান, ক্যাপচারের গভীরতা ও থ্রি-ডিতে দেখার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উন্নততর হচ্ছে ক্যামেরার Sensor। যুক্ত হচ্ছে একাধিক Lense। ইন্টেলের রিয়েলসেন্সের মতো কিছু ল্যাপটপ ও ট্যাবলেটে ইতিমধ্যেই একাধিক সেন্সরযুক্ত ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ক্যামেরায় মুখায়ব দেখে লগ-ইন করার সুবিধা যুক্ত হবে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের পরামর্শ, এখনই তাই দামি DSLR কেনার দিকে ঝুঁকবেন না। একাধিক-লেন্স প্রযুক্তির ক্যামেরার মাধ্যমে আপনি ভালো ছবি তোলা যাবে এবং আকার ও ওজনে সেসব ক্যামেরা হবে আরও সুবিধাজনক।

Sound wall: শিল্প শুধু চোখে দেখার জিনিষ যে নয় সেটা সাউন্ডওয়াল ভুল প্রমাণ করে দিল। আধুনিক প্রযুক্তির ক্যানভাসে শুধু শৈল্পিক কোন চিত্রকর্মই ভাসবে না, সঙ্গে বাজবে চিত্রশিল্পীর বেছে নেয়া গান। ওই গানের শব্দে চিত্রকর্মের সৌন্দর্য অনন্য মাত্রা পাবে, তাতে সন্দেহ নেই। বর্তমানে সাউন্ডওয়ালের সীমিত একটি সংস্করণ বাজারে এসেছে। দাম পড়বে ৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার প্রায় পৌনে তিন লাখ বাংলাদেশি টাকা।

Safe and secured Drone: আকাশ থেকে ছবি তোলা এখন ড্রোনের জন্য অনেক সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু যেভাবে ড্রোনের ব্যবহার বাড়ছে, তাতে একে শিগগিরই হেলিকপ্টারের চেয়েও ক্যামেরার মতো মনে হবে বেশি। Lily নামে একটি ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান Water resistance ড্রোন বানাচ্ছে। নৌকায়, সমুদ্রতীরে সেলফি নেবার সময় অনুসরণ করবে এ ড্রোন।

Devialet phantom wireless sound system: সাধারণ কোন প্রযুক্তিকে অসাধারণ কিছুতে পরিণত করার জন্য ডেভিয়ালেট এর জুড়ী মেলাভার। দ্য ফ্যান্টম এ ধরনেরই অসাধারণ কিছু। দেখতে এ যন্ত্রটা অনেকটা বিশ্বখ্যাত ‘সাইয়েন্স ফিকশন’ চলচ্চিত্র ‘স্টার ওয়ার্সে’র ‘ডেথ স্টার’-এর মতো। ফ্যান্টম ঘরের যেকোন স্থানে রাখলেই পুরো ঘরজুড়ে শব্দের ঝঙ্কার শোনা যাবে। এর মূল্য ১৪০০ মার্কিন ডলার।

Lantronix zano quadcopter: ছোট কপ্টার ও কোয়াডকপ্টার নতুন কিছু নয়। তবে ল্যান্ট্রনিক্স য্যানো কোয়াডকপ্টারের বিশেষত্ব হচ্ছে, এর ছোট আকার। এছাড়া সাধারণ একটি অ্যাপের সাহায্যে একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেন্সরের মাধ্যমে কোয়াডকপ্টার বাধা শনাক্ত করে তা এড়িয়ে চলতে পারে। আধুনিক খেলনা হিসেবে যে কাউকে এটি আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে।

Intelligent messaging app: ২০১৬ সালে মেসেজিং কেবল বন্ধুদের কাছে এসএমএস পাঠানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং এটি হয়ে উঠবে সব ধরনের রোবটিক সাহায্য পাওয়ার উপায়ও। San Francisco এলাকায় ফেসবুক মেসেঞ্জারের পরীক্ষামূলক সংস্করণ ব্যবহারকারীরা কণ্ঠের নির্দেশে আশেপাশের কোন রেস্তোরাঁয় আসন বুক দিতে পারেন। বন্ধুকে দেয়ার জন্য কিনতে পারেন উপহার। গুগলও একই ধরনের একটি অ্যাপ বানানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে। রোবটিক বুদ্ধিমত্তার বাইরেও অনেক কিছু যুক্ত হবে মেসেজিং অ্যাপে। কারও সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক করা, গেম খেলা, বার্তা অনুবাদসহ অনেক কিছু সম্ভব হবে এবার।

USB type-C port:  ইউএসবি পোর্ট পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে, আরও ছোট ও দ্রুতগতির ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট আসতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই অ্যাপলের নতুন ম্যাকবুক ল্যাপটপ ও গুগলের নেক্সাস ৬পি মোবাইল ফোনে দেখা গেছে এ পোর্ট।

Voice control: কণ্ঠের নিয়ন্ত্রণ সর্বত্র। গ্যাজেট শুনবে সবকিছু। ২০১৬ সালে কণ্ঠ-পরিচালিত ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীতে বুদ্ধিমত্তা ও নির্ভুলতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া যন্ত্র এবার আপনার সঙ্গে কথা বলবে আরও স্বাভাবিকভাবে। বিশেষ করে টিভি, সাউন্ড সিস্টেম ও গৃহস্থালি ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রে এর প্রভাব থাকবে বেশি।

Smartwatch: বর্তমানে স্মার্টওয়াচ হাঁটার সময় পদক্ষেপের সংখ্যা গোনা ও সময় বলা ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারে না। তবে স্মার্টওয়াচের নিজস্বতা দেখা যাবে এ বছর। এসব ঘড়িতে এখন থাকবে Wireless, ফোন ও GPS প্রযুক্তি। ফলে ফিটনেস সচেতন ব্যক্তিরা পাবেন আরেকটু সুবিধা। এলজি ও স্যামসাং সম্প্র্রতি Cellular ইন্টারনেট সুবিধাযুক্ত Smartwatch বাজারে ছেড়েছে। খুব শিগগিরই স্মার্টওয়াচের সঙ্গে যুক্ত হবে Wireless প্রযুক্তিও।

Home smart device: এখন গৃহস্থালি যন্ত্রেও ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রিন্টার ও ওয়াশারের মতো বিভিন্ন যন্ত্রে যখন কালি বা ডিটারজেন্ট শেষ হয়ে যাবে, তখন আপনা-আপনিই এটি অর্ডার দেবে। এমন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে Amazon। এছাড়া গুগলের Nest নামে আধুনিক ঘরে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেসবে ইন্টারনেট সংযোগ অপরিহার্য। যেমন, Security Lock, Fire Alarm ইত্যাদি।