A young boy looks distressed between arguing adults, illustrating the impact of childhood neglect and abuse on mental development.

শিশুদের প্রতি অবহেলা ও দুর্ব্যবহার তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যহত করে

May ১৩, ২০২৪

সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল শিশুরা শৈশবকালে অবহেলা ও দুর্ব্যবহারের শিকার হয় তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ এবং আইকিউ স্কোর কম হতে পারে। জুডিথ জোসেফ তার সহকর্মীদের সাথে মিলে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন যা নিউরোবায়োলজি অফ স্ট্রেস-এ প্রকাশিত হয়। গবেষকরা লক্ষ্য করেন যে, শৈশবকালে দুর্ব্যবহারের অভিজ্ঞতার তীব্রতা পরবর্তীতে মস্তিস্কের নেতিবাচক প্রভাবগুলির সাথে যুক্ত।

ইতোপূর্বে অসংখ্য গবেষণায় প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়ে তাদের মস্তিষ্কের কাঠামো ও কার্যকারিতার বৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। জানা গেছে মস্তিস্কের অ্যামিগডালা, হিপ্পোক্যাম্পাস এবং প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স অংশগুলো আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং চাপের প্রতিক্রিয়ার সাথে জড়িত।

এই গবেষণা্র জন্য গবেষকরা ৩-৫ বছর বয়সী ৪৯ জন শিশুকে বাছাই করেন যারা পূর্ববর্তী ৬ মাসের মধ্যে মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন বা অবহেলার মতো দুর্ব্যবহারের সম্মুখীন হয়েছিল। গবেষকরা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ পরিমাপ করতে এম. আর. আই স্ক্যান ব্যবহার করেন এবং আইকিউ পরীক্ষা করে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেন। গবেষকরা শিশুদের মস্তিষ্কের ইন্ট্রাক্র্যানিয়াল ভলিউম (আই. সি. ভি) এবং গ্রে ম্যাটার ভলিউম সহ তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ পরিমাপ করতে এম. আর. আই ব্যবহার করেন। এই গবেষণায় গবেষকরা দুর্ব্যবহারের তীব্রতা বোঝার জন্য অংশগ্রহণকারী শিশুদের থেকে ইন্টারভিও নিয়েছেন। গবেষণার শুরুতে একটি এবং এর এক বছর পরে আরও একটি আইকিউ টেস্ট ও করা হয় বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ পরিমাপ করার জন্য।

গবেষণায় দেখা যায়, যেসব শিশুরা গুরুতর দুর্ব্যবহারের সম্মুখীন হয়েছে তাদের আইসিভি এবং মস্তিষ্কের বিকাশ কম ছিল। এটি মূলত মস্তিষ্কের মধ্যে ইনফরমেশন প্রসেস করার জন্য এবং বিভিন্ন জিনিস শেখার জন্য মস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটার নামক যে অংশ রয়েছে তার ভলিউম কমে যাওয়ার জন্য দায়ী। গবেষণায় জানা যায়, অংশগ্রহণকারীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, বয়স, উচ্চতা এবং লিঙ্গের মতো বিষয়গুলি বিবেচনা করার পরেও এই ফলাফলগুলি ঠিক।

গবেষণায় আরও জানা যায়, খারাপ ব্যবহার বিকশিত মস্তিষ্কের (Developing Brain) এর উপর প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি খুব ছোট শিশুদের মধ্যেও এটি ঘটতে পারে। যে শিশুরা দুর্ব্যবহারের শিকার হয়, তাদের প্রায়ই বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ব্যহত হয় এবং প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও তাদের বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

গবেষকরা মনে করেন দুর্ব্যবহারের সময় স্ট্রেস হরমোনগুলি মস্তিষ্কের কোষগুলির বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং মস্তিষ্কের কোষগুলির মধ্যে অব্যবহৃত সংযোগগুলি দূর করার সিনাপটিক প্রুনিং প্রক্রিয়াটিকে ব্যাহত করে। এই সিনাপটিক প্রুনিং প্রক্রিয়াটি মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য, এবং এর ব্যাঘাতের ফলে মস্তিষ্কের আকার ছোট হতে পারে।

গবেষকরা এই গবেষণায় আরও জানিয়েছেন তাদের পর্যবেক্ষিত প্রভাবগুলি দুর্ব্যবহার ছাড়া অন্য কারণেও হতে পারে। গবেষকদের মতে দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়া শিশুরা সুবিধাবঞ্চিত পরিবেশ থেকে আসতে পারে বা তাদের জিনগত প্রবণতা থাকতে পারে যা তাদের মস্তিষ্কের বিকাশকে প্রভাবিত করেছে। এই গবেষণায় গবেষকরা পরবর্তীতে দুর্ব্যবহারের শিকার না হওয়া শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ নিয়ে পর্যবেক্ষণ এবং আরও বেশি ডেইটা নিয়ে গবেষণা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

সামগ্রিকভাবে বলা যায়, শৈশবের দুর্ব্যবহার মস্তিষ্কের বিকাশ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেসব শিশুরা দুর্ব্যবহারের সম্মুখীন হয়েছে তাদেরকে মানসিকভাবে সহায়তা করার জন্য বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন রকম সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করা যেতে পারে।

জান্নাতুল নাঈম চৌধুরী


তথ্যসূত্র

Judith Joseph, Claudia Buss, Andrea Knop, Karin de Punder, Sibylle M. Winter, Birgit Spors, Elisabeth Binder, John-Dylan Haynes, and Christine Heim. “Greater maltreatment severity is associated with smaller brain volume with implication for intellectual ability in young children.” Neurobiology of Stress, vol. 27, 2023, p. 100576, ISSN 2352-2895, https://doi.org/10.1016/j.ynstr.2023.100576.