ডিজাইনে কালারের ব্যাবহার [ পর্ব ৪ ] – রঙের গভীরে

জুন ৭, ২০১৬

এই পর্বে আপনাদের কে কালার এর আরেকটু বেসিক আলোচনাতে নিয়ে যাবো। যা অবশ্যই জানা দরকার। বিশেষ করে যারা ফটোশপ এবং ইলাস্ট্রেটরে কাজ করেন তারা কালার বক্স ওপেন করলে সেখানে অনেক কিছুই দেখতে পান কিন্তু হয়তো অনেকেই ব্যাপারগুলো বোঝেন না যে, এখানে এইগুলোর মিনিং কি। নিচের ইমেজ টিতে লক্ষ্য করুন ঃ

    
ফটোশপের কালার বক্স                                                               কালার মুড  

উপরের মার্ক করা ব্যাপারগুলোর সাথে অনেকেই পরিচিত। আবার অনেকেই পরিচিত নন। অনেকে হয়তো কিছুটা জানেন আবার অনেকেই জানেন না। চলুন বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

What is RGB Color Mode?

এটা সবাই জানেন যে, RGB এর অর্থ হচ্ছে R = Red, G = Green and B = Blue। অনেকেই এ কারণে নীল রং কে মৌলিক কালার বলে থাকে। যারা এইরূপ ধারণা করে, তাদের ধারণা ভুল। ওয়েব এর কালার ৩ টা চ্যানেলে হয়। যেখানে লাল, সবুজ এবং নীল কালার ব্যবহৃত হয়। ওয়েবের কালার টা একটু ঔজ্জ্বল্য থাকে । RGB Mode এ  তখন’ই কাজ করতে হয়, যখন ওয়েব ভিত্তিক কোন কিছু ডিজাইন করবেন। যেমন, ওয়েব টেমপ্লেট, ওয়াল পেপার, এ্যানিমেশন ইত্যাদী। অর্থাৎ ওয়েবে বা মনিটরে বা মোবাইলের স্ক্রিনে দেখাবে এবং যেটা প্রিন্ট করা হবে না। এমন ডিজাইন করার সময় RGB Mode নিয়ে কাজ করতে হয়।

আপনি ইচ্ছা করলে ওয়েবের জন্য RGB ছাড়া অন্য মুড এ কাজ করতে পারবেন কিন্তু তা ওয়েবের জন্য পারফেক্ট হবে না।
RGB এর প্রত্যেকটা কালারের Value থাকে ০  থেকে ২৫৫ পর্যন্ত। অর্থাৎ তিনটা কালারের ভ্যালু গুলো  ে এভাবে থাকে 255,255,255 ।

যদি RGB তে তিনটার Value ই ২৫৫ রাখেন তাহলে তার কালার হবে ব্রাইট অর্থাৎ সাদা এবং তিনটা যদি ০ ০ ০ রাখেন তাহলে তার কালার হবে কালো। কালার চেঞ্জ করার জন্য আপনারা এই value গুলো পরিবর্তন করে কালার পরিবর্তন করতে পারেন।

What is CMYK Mode?

আপনি যদি কোন ডিজাইন প্রিন্ট করার জন্য করে থাকেন অর্থাৎ লোগো, ব্রশিউর, ব্যানার, হ্যান্ডবিল, বিজনেস কার্ড, ফ্লেয়ার ইত্যাদী তাহলে তার আগে আপনার ডিজাইনের মুড টা CMYK এ নিয়ে কাজ করতে হবে। কেননা, প্রিন্ট এর কালার টা একটু ডিপ হয় অর্থাৎ ওয়েব কালার এর মত ফোকাসপূর্ণ বা উজ্জল হয় না। যার কারণে যেভাবে ডিজাইন করেছেন সেভাবেই যদি আপনি আপনার প্রিন্ট এর কালার চান তাহলে অবশ্যই ডিজাইন করার সময় CMYK মুড নির্বাচন করে নিয়ে কাজ করতে হবে।

CMYK এর অর্থ হচ্ছে, C = Cyan , M = Magenta, Y = Yellow and K means Black , অর্থাৎ CMYK কালার মুড টা ৪ টা কালার চ্যানেল সাপোর্টেট। উপরের ইমেজে দেখুন নিচের দিকে ডান পাশে CMYK কালারের ঘর । প্রত্যেকটা কালারের অংশে % দেওয়া আছে। অর্থাৎ আপনি কালারের পার্সেন্টিজ হিসেবে েএখানে কালার সিলেক্ট করতে পারবেন। কোন কালার কত পার্সেন্ট করে হবে সেটা দিয়ে দিতে পারবেন।

What is GrayScale Mode?

GrayScale নামটার মধ্যেই সাদা-কালো বোঝা যাচ্ছে। হ্যা। আপনি যদি সাদা কালো কোন কিছু সহজেই করতে চান  তাহলে আপনার ডিজাইন মুড GrayScale এ নিয়ে নিন। এতে আপনার কাজ করতে সুবিধা হবে।

What HSB in Color Pallet?

H = HUE ঃ  উপরের ইমেজ টা লক্ষ্য করুন , দেখবেন যে, উপরে বাম পাশের মার্ক করা স্থানে  HSB নামের তিনটা ঘর আছে। অনেকেই জানেন না ফটোশপে এই তিনটা ঘর এর কাজ কি!

H means Hue আর এর অর্থ হচ্ছে কালার। অর্থাৎ আপনি এর H বা Hue এর ঘরে কোন ভ্যালু পরিবর্তন করলে কালার বক্স এর কালারের পরিবর্তন হবে। হিউ এর ঘরে ডিগ্রি আকারে ভ্যালু দিতে হয়। এখানে মোট ৩৬০ পর্যন্ত আপনি ভ্যালু বসাতে পারবেন।

লক্ষ্য করুন হিউ এর ঘর সিলেক্ট করার সাথে সাথে কালার বক্সে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই ঘরেরে একেকটা ডিগ্রি একেকটা কালার বহন করে।

এখানে আপনি ০ থেকে ৩৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত দিতে পারবেন। এবং প্রতিটি ডিগ্রিই একেকটা স্বতন্ত্র কালার। যেমন উদাহরণ হিসেবে, আপনি যদি হিউ েএর ঘরে ০ অথবা ৩৬০ দেন তাহলে সেটা লাল কালার হবে। অর্থাৎ এটা লাল কালার । এমনি ভাবে হলুদ কালারের জন্য ১২০ ডিগ্রি, সবুজ কালারের জন্য ১৮০ ডিগ্রি, নীল কালারের জন্য ২৪০ ডিগ্রি ইত্যাদী। এমন ভাবে আপনি কালারের ভ্যালু বসিয়ে এক্সাক্টলি কালার দিয়ে কাজ করতে পারেন।
S = Saturation ঃ  এবার আসা যাক S বা Saturation এ। এটা কালারের পরিমাণ নির্দেশ করে। অর্থাৎ এখানে আপনি ০ থেকে ১০০% পর্যন্ত ভ্যালু বসাতে পারবেন। ১০০% মানে হচ্ছে ফুল কালার। যদি আপনি ১০০% এর থেকে একটু একটু করে কমিয়ে আনেন তাহলে আপনার কালার টাও আস্তে আস্তে সাদা হয়ে আসবে। অর্থাৎ কালারের ঘনত্ব কমে আসবে।

উপরের ইমেজে লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন যে, Saturation এর ঘর সিলেক্ট করার পরে লম্বা কালারের ঘরটা একটু পরিবর্তন হয়েছে। উপরের দিকে ফুল কালার এবং নিচের দিকে সাদা কালার দেখাচ্ছে। এভাবে আপনি সহজেই একটা কালারের মধ্যে সাদা কালার দিয়ে অনেক কালার তৈরী করতে পারবেন।

B = Brightness ঃ  এবার আমারা যদি কালারের Brightness বা উজ্জলতা বাড়াতে কমাতে চাই তাহলে আমাদের B এর ঘরটি সিলেক্ট করতে হবে। নিচের ইমেজ লক্ষ্য করুন ঃ

দেখুন যে, B এর ঘরটি সিলেক্ট করার পরেই লম্বার কালার বক্স এর উপরের দিকটা উজ্জল কালার এবং নিচের দিকটা কালো। যদি কেউ কালারে কালোর পরিমান বাড়াতে কমাতে চান তাহলে আপনার এই ঘর সিলেক্ট করার মাধ্যমে অনেক কালার তৈরী করে কাজ করতে পারবেন।

অনেক কালার তৈরীর পদ্ধতি আপনারা পূর্বের পর্বে পড়েছেন।

What is Lab Color Mode or How to Use Lab Color Pallet?

ল্যাব কালার টা RGB এর মত তিনটা কালার চ্যানেল সাপোর্ট করে। আপনি ল্যাব কালার মুডে করা কোন ডিজাইন ওয়েব এর জন্য Show করাতে পারবেন না। কেননা, এটা .jpg or .png তে সেভ করা যায় না। এবার আসুন কিভাবে এটার কালার বক্স ব্যাবহার করবেন। ? নিচের ইমেজের মার্ক করা অংশের দিকে লক্ষ্য করুন। ওটাই ল্যাব কালারের বক্স।

L = Lightness

L বা লাইট হচ্ছে কালারের মধ্যে লাইট বা সাদা বা উজ্জলতা বাড়ানের পদ্ধতি। লাইটের ভ্যালু ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত থাকে । যেখানে ০ যদি রাখেন তাহলে ওই কালারের কালারের সর্বোচ্চ কালো কালার টি দেখাবে । আবার যদি সেখানে আপনি লাইটের ভ্যালু বাড়াতে থাকেন তাহলে আপনার কালারের মধ্যে সাদা অংশের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
২য় পর্বে অনেকেই প্রশ্ন করেছিলেন যে, কালারের মধ্যে পর্সেন্টিজ আকারে কিভাবে সাদা কালার মিশ্রণ করে হাজার হাজার Tints কালার তৈরী করবেন। হ্যা এখানেই রয়েছে আপনাদের প্রশ্নের সমাধান। আপনি এই Lightness বা L এর ঘরে ৫% , ১০% ,১৫%, ২০% করে যদি একটু একটু করে বাড়াতে থাকেন তাহলে আপনি হাজার হাজার Tints কালার তৈরী করতে পারবেন।
অর্থাৎ L = Lightness, Value 100 = white Color , 0 = Black color, যদি আপনি নির্দিষ্ট মাত্রায় সাদা কালার যোগ করে অনেক কালার তৈরী করতে চান তাহলে আপনাকে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় এই ভ্যালু বাড়ি Tints Color তৈরী করতে হবে।

a = Cyan to Magenta

এই ল্যাব কালারের a অর্থ হচ্ছে Cyan to Magenta । এটার ভ্যালু -১২০ থেকে +১২০ পর্যন্ত। অর্থৎ আপনি যদি Cyan থেকে Magenta পর্যন্ত কালার ভ্যালু এই ল্যাব বক্স এর মাধ্যমে দিতে চান। তাহলে ‍a বক্স টা সিলেক্ট করে কাজ করতে হবে।

লক্ষ্য করুন a বক্সটি সিলেক্ট করার পরেই কালার টাতে Cyan থেকে Magenta পর্যন্ত যত কালার আছে সব দেখাচ্ছে। অন্য কোন কালার এই প্যালেটে দেখাচ্ছে না। অর্থাৎ আপনি -120 থেকে +120 পর্যন্ত কালার ভ্যালু দিয়ে এই কালার গুলো সিলেক্ট করতে পারবেন।

b = Blue to Yellow

Lab Color এর b এর অর্থ হচ্ছে Blue to Yellow কালার। অর্থাৎ Blue থেকে Yellow পর্যন্ত কালার গুলো এই বক্সে এর মাধ্যমে দেখাবে।

উপরের কালার বক্স এর দিকে লক্ষ করলে দেখবেন যে, নীল থেকে হলুদ পর্যন্ত সৃষ্ট কালার গুলো এই প্যালেটে দেখাচ্ছে। এভাবে আপনি -120 থেকে +120 পর্যন্ত ভ্যালু দিয়ে আপনার পছন্দের কালার টি ব্যাবহার করতে পারেন।
What is Color Hex Code?

উপরের ইমেজে সিলেক্ট করা অংশের কোডটি ই হচ্ছে কালারের Hex কোড। এই কোড আপনি ওয়েব সহ যেকোন যায়গায় ব্যাবহার করতে পারেন। সঠিক ভাবে একটা কালার কে কপি করার জন্য অবশ্যই এই কোড ব্যাবহার করবেন। ওয়েব , প্রিন্ট সহ যেকোন স্থানে এই কোড ব্যাবহার করে আপনি হুবুহু কালার যোগ করতে পারবেন।

Tahmid Hasan
User Experience Professional 

How To Use Color in Design – Part 03