সম্প্রতি ব্লু হোয়েল গেমটি সকলের আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কি এই ব্লু হোয়েল গেইম? আর কেনই বা এটি এত সাড়া ফেলেছে আসুন জেনে নেয়া যাক।
F57 নামক একটি রাশিয়ান হ্যাকার টিম গেমটি তৈরি করে । গেমটি ২০১৩ সালে তৈরি হলেও ২০১৫ সালে VK.com নামক সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল জনপ্রিয়তা পায় এবং প্রচুর ডাউনলোড হয় । ফিলিপ বুদেকিন নামক সাইকোলজির ছাত্র রুশ হ্যাকার ছিলো ব্লু হোয়েল গেমটির আবিষ্কারক। রাশিয়ান আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতারের পর সে জানায় হতাশাগ্রস্হদের পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার জন্যই সে গেমটি বানিয়েছে । হতাশা গ্রস্হদের পৃথিবীত বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই ।
অনলাইন গেম ব্লু হোয়েল। ৫০টি ধাপ। যার সর্ব শেষ পরিণতি মৃত্যু। ব্লু হোয়েল বা Blue whale এর অর্থ নীল তিমি । নীল তিমিরা মৃত্যুর আগে সাগরের তীরে উঠে আসে – তারা আত্মহত্যা করে বলে অনেকের ধারণা ! একারণেই গেমের নাম রাখা হয়েছে “Blue whale” বা নীল তিমি । মনে রাখবেন–গেমটি বাধ্য করে তার ইনস্টলকারীকে সবগুলো স্তর খেলার জন্য।
গেমটির প্রথম দশটা লেভেল খুবই আকর্ষনীয়। ইউজার এডমিন কিছু মজার মজার নির্দেশনা দেন – যেমন ১.রাত তিনটায় ঘুম থেকে উঠে হরর ছবি দেখা ২.চিল্লাচিল্লি করা ৩.উঁচু ছাদের কিনারায় হাঁটাহাঁটি করা ৪.পছন্দের খাবার খাওয়া ইত্যাদি নির্দেশনা দিতে দিতে এডমিন হাতিয়ে নেবেন আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন। প্রথম দশ টা লেভেল পার করার পর আপনাকে তৈরি করা হবে পরবর্তী দশটি লেভেলের জন্য। পনেরো লেভেল পর্যন্ত চলবে আপনার ইনফরমেশান হাতানোর কাজ! পনেরো লেভেলের পর আপনাকে কঠিন মিশন দেয়া শুরু হবে ! যেমন অ্যাডমিন আপনাকে বলতে পারে আপনার হাতে ব্লেড দিয়ে নীল তিমির ছবি আঁকুন বা এমনই অননেক কিছু।
বিশটি ধাপ অতিক্রম করার পর এডমিন তার কৌশল পরিবর্তন করবেন এবং আপনাকে মোহান্নিত বা হিপ্নটাইজ করা শুরু করবে।
আপনাকে আরও বিভিন্ন রকমের টাস্ক দেওয়া হবে যেমন;
১.শীতের দিনে খালি গায়ে ঘুরে বেড়ানো।
২.বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করা।
৩.প্রিয় বন্ধুর সাথে খারাপ ব্যবহার করা ইত্যাদি।
এভাবেই কৌশলে বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের থেকে কৌশলে আলাদা করে ফেলা হবে আপনাকে এবং আপনি পৌঁছে যাবেন পঁচিশ লেভেলে!
পঁচিশ লেভেলের পর নির্দেশনা আসবে মাদক বা ড্রাগ নেবার ! এভাবেই সম্মোহিত করে করে আপনাকে তিরিশ লেভেল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে।
তিরিশ তম লেভেল আপনি অতিক্রম করার পর গেম এডমিন হঠাৎ আপনার সাথে একটু চিট শুরু করবে !একত্রিশ তম লেভেল আনলক করবে না , এদিকে আপনি হয়ে উঠবেন ক্রেজী !
তারপর কিছুদিন আপনাকে সারপ্রাইজ দিয়ে হঠাৎ এডমিন – বলবে একত্রিশ তম লেভেল আনলকড ! আপনার নগ্ন ছবি চাওয়া হবে এই স্তরে ! আপনি হিপনোসিস ও মাদকের কারণে নিজের নগ্ন ছবি পাঠাতেও চিন্তা করবেন না , ড্রাগ নেবার র মাত্রা বাড়াতে থাকবেন আপনি ! এরপর নির্দেশনা আসবে আপনার ভালোবাসার মানুষের সাথে সেক্স করে গোপনে ছবি তুলে আপলোড করতে বা নিজের শরীরে একাধারে শ খানেক সুঁই ফোটাতে এবং ফটো আপলোড করে পাঠাতে ।
এভাবেই চলে যাবেন আপনি চল্লিশ তম লেভেলে ! এবার আপনি ভীত হয়ে গেমার টিমকে অনুরোধ করবেন আপনাকে মুক্তি দেবার জন্য ! আপনি কাঁদবেন , হাতজোড় করবেন , চাইবেন গেমটি আনইনস্টল করার জন্য !
তখন শুরু হবে ব্ল্যাকমেইলিং ! গেমার টিম বা এডমিন তখন আপনারই পাঠানো সকল তথ্য ফাঁস করে দেবার হুমকি দেবে , আপনি বাধ্য হয়ে প্রবেশ করবেন একচল্লিশ তম স্তরে ! একচল্লিশ থেকে ঊনপন্চাশ তম লেভেলে আপনি প্রচন্ড হতাশ আর মাদকাসক্ত হবেন পন্চাশ তম স্তরে আপনাকে মুক্তির শর্ত দেয়া হবে ! বলা হবে আপনাকে নিজের শরীরে অ্যানাসথেসিয়ার ড্রাগ ক্যাটামিন পুশ করে তাদের কে ছবি পাঠাতে এবং নিশ্চিত দশ তলার চেয়েও উঁচু কোনো ছাদের একেবারে কিনারায় দাঁড়িয়ে যদি সেলফি আপলোড দিতে পারেন তবে আপনি মুক্ত !
আপনি সেটা পারবেন না আর, কারণ শরীরে পুশ করা ক্যাটামিন আপনার মস্তিষ্কে চলে যাবে ততোক্ষণে আপনি মোবাইলের স্ক্রীণে তখন নির্দেশ আসবে নিচের দিকে তাকাও লাফ দাও , মুক্তি পাও ! “আপনি মুক্তি পেতে গিয়ে আত্মহত্যা করবেন !”
এই ব্লু হোয়েল গেমটিতে ব্যবহার করা হয়েছে চমৎকার গ্রাফিক্স , ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক! All I want ও Ranway গানের মিউজিক ব্যবহার করা হয়েছে ।দুটো মিউজিক শুনলেই শরীরের রক্ত হীম হয়ে যাবে !
সুতরাং সতর্ক হউন এবং নিজেকে ভালবাসুন।
Tashrif Amin
– Techwriter