“শুধু সফট্ওয়ার বা টুল এর উপর জোড় দিলেই চলবে না” – চৌধুরী রেজাউর রহমান শাহেদ

August ১০, ২০১৭
“ইউ এক্স” কি, এর প্রয়োজনীয়তা এবং কাজের ক্ষেত্র  ও প্রয়োগবিধি নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক কিছু আমরা জেনিছি। কিন্তু আজ আমরা জানবো কিভাবে একজন ইউএক্স ডিজাইনার কাজ করে, তার কাজের ধরন কেমন এবং অন্যদের জন্য চমৎকার একটি অনুপ্রেরণার  গল্প।

পরিচয় – আমি চৌধুরী রেজাউর রহমান শাহেদ। পড়াশোনা করছি কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে এবং পাশাপাশি কাজ করছি ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইনহিউম্যান সেন্টার্ড ডিজাইন নিয়ে।

ইউএক্স ডিজাইনার হয়ে ওঠার গল্প – ছোট বেলা থেকেই ডিজাইন , এনিমেশন , টেকনোলজি এসব দিকে একটা ঝোক কাজ করতো। ডিজাইন , ইলাস্ট্রেশন বা এনিমেশন এ হাতেখড়ি অনেক আগে হলেও ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন জগতে ঠিক দুই বছর আগেও তেমন কিছুই জানতাম না। সময় টা ২০১৫ সালের শেষের দিকে, কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনার এক পর্যায়ে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন সম্পর্কে জানা হলো, ইউজার রিসার্চ , ইনফরমেশন, আর্ট এবং ডিজাইন ইত্যাদি সবকিছুর একই সুতায় মেলবন্ধন এবং সেই সুবাদে এসব নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাও জন্মালো। তারপরেই টুকটাক কাজ করতে করতে হঠাত একদিন ইউজারহাব সম্পর্কে জানতে পারলাম এবং ডিসিশন নিয়ে নিলাম সেখানে ইউ এক্স এর সার্টিফাইড কোর্স টাও করে ফেলার। ইউজারহাব থেকেই মূলত আমার ইউ এক্স ক্যারিয়ার এর আসল পথ চলা শুরু, এভাবেই আস্তে আস্তে চলে এলাম ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এর প্রোফেশনাল ফিল্ড এ।

কাজের ক্ষেত্র – আমি মোবাইল এ্যাপলিকেশন এবং ওয়েব এর ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডেভেলপমেন্ট এ কাজ করি। ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন এবং হিউম্যান সেন্টার্ড ডিজাইন’ই হচ্ছে আমার কাজের মূল জায়গা।

অনুপ্রেরনা  – কোন কাজ সম্পর্কে অনুপ্রেরণা তখন’ই পাওয়া যায় যখন সেই কাজ সম্পর্কে জানার প্রচুর আগ্রহ থাকে। আমার ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হয়নি। ইউজার এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে কাজ শুরু করার আগে যেমন এটা নিয়ে প্রচুর ঘাটাঘাটি করতাম, কাজ শুরু করার পরেও তা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আর ইউ এক্স এ ক্যারিয়ার গড়তে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ইউজারহাবের সহপ্রতিষ্টাতা ওয়াহিদ আহসান ভাইয়া তো আছেন ই !

সফল কিছু কাজ – সফল কাজ গুলোর মধ্যে আছে ব্রাক এর ই-বার্তা (BRAC-E-BARTA) মোবাইল এ্যাপ, যে এ্যাপ এর মাধ্যমে ব্রাক প্রায় বিশ হাজার স্কুল এর কার্যক্রম বার্তা ও তথ্য একই সাথে দ্রুত পেতে পারে।  আইটিমেডিকাস এর DIMS (Drug Information Management System) মোবাইল এ্যাপ, যা মেডিকেল ড্রাগের এক বিশাল তথ্যভান্ডার ও চিকিৎসা বিষয়ক সহায়ক মোবাইল এ্যাপলিকেশন , এছাড়াও ইলেকট্রনিক লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম মোবাইল এ্যাপ, প্রতিবন্ধিদের রাস্তাঘাটে চলতি সহায়ক এ্যাপ, হেলথ এইড মোবাইল এ্যাপ, রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম সমস্যার সমাধান-পার্কমি ইত্যাদি মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন গুলোর নাম উল্লেখযোগ্য।

ইউএক্স এর প্রয়োজনীয়তা – ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা আমাদের চোখের সামনেই! গুগল, ফেসবুকের মত বড় বড় টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত তাদের ইউজারকে ভালো এক্সপেরিয়েন্স দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে এবং আমরা তাদের কাছ থেকে ভালো এক্সপেরিয়েন্স পাচ্ছি বলেই আমরা এসব প্রোডাক্ট গুলো ইউজ করছি। ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এর উপর জোর কম দেয়া হলেই অনেক ভালো ভালো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস আইডিয়া গুলোও হারিয়ে যায়।

আমাদের দেশে বর্তমানে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ফিল্ডে কাজে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। কারন আইটি সেক্টরে আমরা এখনো এর গুরুত্ব ততটা বুঝে উঠতে পারি নাই এবং একই সাথে লোক সংকট ও সঠিক জ্ঞান ও দক্ষতার অভাবেও কাজের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থেকে যাচ্ছে। তবে অনেক আইটি কোম্পানি  এখন ইউ এক্স ফিল্ড নিয়ে বিস্তর কাজ করা শুরু করেছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমরাও পুরো বিশ্বে পাল্লা দেয়ার মতো সঠিক ইউজার এক্সপেরিয়েন্স দেয় এমন প্রোডাক্ট বানাতে সক্ষম হবো ।

পরামর্শ বা উপদেশ – যারা ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ফিল্ড এ কাজ করতে চান বা করছেন তাদের উদ্দেশ্যে শুধু একটাই অনুরোধ  ইউ এক্স নিয়ে কাজ করার আগে শুধুমাত্র সফট্যওয়ার বা টুল না শিখে অবশ্যই আগে ইউজার সম্পর্কে গভীর জ্ঞান, তাদের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা , চাহিদা সম্পর্কে জানা ও প্রাধান্য দেয়া সহ ইনফরমেশন এর আর্কিটেকচার তৈরীর দক্ষতা তৈরি করতে হবে। কারন আপনার ইউজার আপনার ডিজাইন কে ততদিন এড়িয়ে চলবে যতদিন আপনি আপনার ইউজার কে এড়িয়ে চলবেন!