Plastic-waste-imbalance-environment

পরিবেশ ভারসাম্যহীনতার অন্যতম প্রভাবক প্লাস্টিক!

অক্টোবর ২৮, ২০১৯

প্লাস্টিক স্বাভাবিকভাবেই ভয়ংকর মাত্রায় প্রভাব ফেলছে সমগ্র বিশ্বের বায়ুমণ্ডলে। নিয়মিত প্লাস্টিক ব্যবহারে পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে। আনুমানিক আট লাখ কোটি টন প্লাস্টিকের আবর্জনা দিয়ে সমগ্র পৃথিবী ও মহাসাগর ঢেকে আছে। কিন্তু এর প্রয়োজনীয়তার মাত্রা বিবেচনা করলে  ক্ষতিকারক দিকগুলো ঢাকা পড়ে যায়।

প্লাস্টিকের আবিষ্কার যে বিংশ শতাব্দীর বৈপ্লবিক আবিষ্কার তা নিয়ে কারো সন্দেহ নেই। প্লাস্টিক যেমন ব্যবহার উপযোগী, ঠিক তেমনি টেকসই ও নির্জীব। ফলে এর বহুমুখী ব্যবহার বাড়ছে। গণমাধ্যমে এর নানান ব্যাবহার রয়েছে, ম্যাগ্নেটিক টেপ, সিডি-ডিস্ক, ফটোগ্রাফিক-ফিল্ম ইত্যাদি কাজে এর ব্যবহার হয়। এছাড়াও মুভি রেকর্ডিং , মিউজিক রেকর্ডিং এর কাঁচামাল প্লাস্টিক থেকেই তৈরি হয়।

বর্তমানের আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রও এই প্লাস্টিকের উপর পুরো নির্ভরশীল। রক্তের ব্যাগ থেকে শুরু করে সিরিঞ্জ, বিভিন্ন ধরনের সার্জারির পাইপ, বিভিন্ন যন্ত্রপাতিতে এর ভূমিকা ব্যাপক। এছাড়াও স্যাটেলাইট, বিভিন্ন মহাকাশযান এমন কি বিমান নির্মাণ ও প্লাস্টিকের উপর নির্ভরশীল।

এছাড়াও মোবাইলফোন, কম্পিউটার, বিভিন্ন ইলেক্ট্রিকাল যন্ত্রপাতি বানানো হয় প্লাস্টিকের সাহায্যে। সুতরাং মানব জীবন প্লাস্টিক ব্যবহার ছাড়া একদিনও চিন্তা করা যায়না। অন্যদিকে এই প্লাস্টিকই তৈরি হয় জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে, যার শুধুমাত্র চার শতাংশ বছরে আসে আমাদেরই ব্যবহৃত তেল ও জ্বালানি থেকে যা পলিমার এর উৎস হিসেবে যোগ হয়। যদিও চার শতাংশ খুব-ই কম, তবে এ দিয়েই মূলত প্লাস্টিক তৈরিসহ জীবাশ্ম জ্বালানি নিষ্কাসন করা হয়ে থাকে। ফলে, এর সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের নিবিড় সম্পর্ক থেকেই যায়।

Bio-plastic

বায়োপ্লাস্টীক্স:

বায়োপ্লাস্টিককে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যাবহার করা যায়। বায়োপ্লাস্টিক যদিও পরিবেশ বান্ধব কিন্তু এর তৈরির  প্রক্রিয়া পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্রাকৃতিক উপকরণ গুলোর  মধ্যে ভুট্টার স্টার্চ, আলুর স্টার্চ, পরিত্যক্ত ব্যাগ কে প্রক্রিয়াজাত করে বায়োপ্লাস্টিক তৈরি করা হয়। “বায়োপ্লাস্টিক” শব্দটি শুনতে ভালো লাগলেও এর কিছু খারাপ দিক আছে।

শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্লাস্টিকের বোতল তৈরির ক্ষতিকর প্রভাব, তৈরির কাঁচামাল বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, “বায়োপ্লাস্টিক সব সময় ভালো না”। যদি কোন কারনে প্রতিদিনের আবর্জনা ও বায়োপ্লাস্টিক একইপাত্রে ফেলা হয় এবং পরে যদি এসব দিয়ে আবার বায়োপ্লাস্টিক তৈরি করা হয়, তখন এর গুণগত মান আগের মতো থাকে না। এক্ষেত্রে অনেক গবেষক মনে করেন, সরাসরি কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে প্লাস্টিক তৈরি করা ভালো। কারন, কার্বন- ডাই- অক্সাইড থেকে প্লাস্টিক তৈরি সম্ভব। 

Recycling-carbon-emissions-into-plastic

কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে প্লাস্টিক:

অধ্যাপক স্টেয়ারিং ১২ বছরের বেশি সময় ধরে গবেষনা করে বের করেছেন যে, জীবাশ্ম-জ্বালানি এর পরিবর্তে ব্যবহারকৃত কার্বন-ডাই-অক্সাইড কে রাসায়নিকভাবে ব্যবহার করে প্লাস্টিক তৈরি সম্ভব। এভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে প্লাস্টিক তৈরির মাধ্যমে জলবায়ুর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা ও গ্রিন-হাউজ গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব কমানো সম্ভব।

কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে প্লাস্টিক তৈরি করাটা নির্ভর করে কিছু প্রভাবক এর উপর। প্রভাবকগুলো রাসায়নিক বিক্রিয়ার হারকে বাড়িয়ে পলিইথার পলিকার্বনেট পলিওল নামক বর্গ তৈরি করে যা পলিইউথ্রেনের মৌলিক উপাদান। এই মৌলিক উপাদান পাওয়া যায় ম্যাট্রেস, কুশন, রেফ্রিজারেটরের হিমায়ক উপাদানে। 

we-live-in-co2

গ্যাসে-ই-বসবাস:

বর্তমানে জার্মানির কারডিওন কম্পানি ২০ শতাংশ কার্বন ডাইওক্সাইড সম্পন্ন ম্যাট্রেস তৈরি করছে। যুক্তরাজ্যে ইকোনিক কম্পানি পলিইউথ্রেন থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি করে। এগুলো প্লাস্টিকের গুনগত মান যেমন বৃদ্ধি করে, একইসাথে তাপমাত্রা সহনশীল হয়ে থাকে।

ইকোনিকের ধারনা মতে, ৩০ শতাংশ পলিউলস তৈরি হয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে ফলে বায়ুমন্ডলের ৯০ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেঁচে  যায়। এছাড়াও প্রতি টন প্রপীলিন অক্সাইড যেখানে ২ হাজার ডলারে পাওয়া যায়, সেখানে প্রতি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড কেবল ১০০ ডলার। ফলে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপাদন খরচ বছরে ১০ মিলিয়ন ডলার বেঁচে যায়।

ইথিলিন পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক কাঁচামাল এবং এর লক্ষই হচ্ছে কার্বন–ডাই–অক্সাইড থেকে ইথিলিন তৈরি করা। সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এনরিকো আন্দ্রেওলি এবং তার টিম কপার সমৃদ্ধ প্রভাবক তৈরি করছে যা কার্বন-ডাই-অক্সাইড একসাথে করে পানি ও রাসায়নিক শক্তির সাহায্যে ইথিলিন তৈরি করে। তবে, প্রায় ২০ বছরের মত সময় লাগবে কার্বন- ডাই-অক্সাইড থেকে ইথিলিন, ইথিলিন থেকে পলিইথিলিন প্লাস্টিক বাজারজাত করতে। অন্যদিকে দেখা গেছে, গত ৩০ থেকে ৪০ বছর চেষ্টা করেও জীবাশ্ম-জালানি থেকে ইথিলিন তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আন্টোইন বুখার্ড এর তত্ত্বাবধায়নে কয়েকজন রসায়নবিদ কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর সাথে চিনি জাতীয় উপাদান মিশিয়ে (জাইলোজ) পলিকার্বনেট তৈরি করেছে। এসব উপাদান বাচ্চাদের খাবার বোতল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রুটজার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়নিকবিদরা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের অণু তৈরির একটা নতুন পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন। এই পদ্ধতিতে, ইলেক্ট্রনের মূল প্রভাবক হচ্ছে ফসফরাস ও নিকেল। এসব প্রভাবক ব্যবহার করে পানি ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিলিয়ে বৈদ্যুতিক শক্তির সাহায্যে জটিল কার্বন-ডাই-অক্সাইড অণু তৈরি করা হয়। যার মাধ্যমে পরে প্লাস্টিকসহ নানা ফার্মাসিউটিক্যালস জিনিস তৈরি করা যায়।

যেখানে জীবাশ্ম-জ্বালানি থেকে ইথিলিন এর মনোমার তৈরি করাটাই অনেক কঠিন ও ব্যায়বহুল, সেখানে মনোমার থেকে পলিমার বানিয়ে প্লাস্টিক বানানো আরো জটিল প্রক্রিয়া। একইসাথে এটা পরিবেশের জন্য হুমকির কারণ। এমতাবস্থায়, বিকল্প উপায় হিসেবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে ইথিলিন তৈরি করতে হবে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়।

(Originally posted on BBC)