প্রথমবারের মত ওয়েল কর্নেল মেডিসিন এবং কর্নেলের ইথাকা ক্যাম্পাসের বিজ্ঞানীরা কোষের অনু-পরমানু নিয়ে নতুন এক গবেষণায় দেখেছেন, অন্ত্রের জীবাণুর সাথে মস্তিষ্কের কোষগুলোর সম্পর্ক আছে।
গবেষকেরা এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে জেনেছেন যেগুলো মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যে ব্যবহার করা যেতে পারে।এগুলোকে তারা বলছেন ‘মুড মাইক্রোবস’ বা ‘সাইকোবায়োটিকস’। যা এক ধরনের মাইক্রোবায়োটা।
গত দুই দশকে বিজ্ঞানীরা অটোইমিউন ডিসঅর্ডারের সাথে বিভিন্ন মানসিক রোগের অবস্থার একটি স্পষ্ট যোগসূত্র পর্যবেক্ষণ করেছেন। পেটের রোগ (আইবিডি), সোরিয়াসিস এবং স্ক্লেরোসিসের মতো অটোইমিউন ডিসঅর্ডার অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটাকে কমিয়ে ফেলে। এসব রোগের কারণে রোগীর মধ্যে উদ্বেগ, হতাশা এবং মেজাজ খারাপের লক্ষন দেখা যায়। তবে ঠিক কীভাবে অন্ত্রের স্বাস্থ্য, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে তা জানা সম্ভব হয়নি।
ফ্রিডম্যান সেন্টারের পরিচালক জিল রবার্টস ইনস্টিটিউট ফর ইনফ্ল্যামেটরি বাওল ডিজিজের পরিচালক এবং সহ-সিনিয়র লেখক ডেভিড আর্টিস, অণু স্তরে কীভাবে অন্ত্র এবং মস্তিষ্কের যোগাযোগ হয়, তার প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে জানতে এই গবেষণা শুরু করেন। মাইক্রোবায়োটা হ্রাস পেলে মস্তিষ্কের কোষে যে পরিবর্তনগুলি ঘটে তা জানতে ইদুরকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। লেখক ডঃ কোকো চু, ইনফ্লামেটরি বাউল ডিজিজের গবেষণা জন্য জিল রবার্টস ইনস্টিটিউটের সহযোগী, ওয়েল কর্নেল মেডিসিন, কর্নেলের ইথাকা ক্যাম্পাস, বয়েস থম্পসন ইনস্টিটিউট, এমআইটির ব্রড ইনস্টিটিউট জুড়ে বেশ কয়েকটি বিভাগের গবেষকদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।গবেষণা টি প্রকাশিত হয় নেচার (chu, 2019)জার্নালে।
ইঁদুরের দেহে এন্টিবায়োটিকের মাধ্যমে মাইক্রোবায়োটা গুলো হ্রাস করে কোষে আরএনএ(RNA) সিকুয়েন্স করে দেখা যায় জিনের যেসব পরিবর্তনের জন্য আচার আচরনে পরিবর্তন আসে ,সেইসকল কোষগুলোর সাথে মস্তিষ্কে থাকা মাইক্রোগ্লিয়া নামক কোষগুলির যোগাযোগ আছে। এই পরিবর্তনগুলো সুস্থ ইঁদুরের মাইক্রগ্লিয়াতে পাওয়া যায়নি।
যে ইঁদুরগুলো কখনোই কোনও ধরনের জীবাণুর সংস্পর্শে আসেনি সেগুলো সাধারণ ইঁদুরের চাইতে বেশী পরিমাণ স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে যখন তারা কোনও সমস্যায় পরে।এটিকে চিন্তার ক্ষেত্রে অণুজীবের অস্তিত্ব বা প্রভাবের বড় একটি ইঙ্গিত বলে ধরে নেয়া হয়
ফেইল ফ্যামিলি ব্রেন অ্যান্ড মাইন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে এবং ওয়েল কর্নেল মেডিসিনের সাইকিয়াট্রির সহযোগী অধ্যাপক ড কনর লিস্টন বলেছেন, “মাইক্রোগ্লিয়ায় জিনের পরিবর্তণের ফলে সিন্যাপ্সের ছাঁটাই, এবং মস্তিষ্কের কোষগুলির মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় আবার নতুন সংযোগগুলির স্বাভাবিক গঠনে বাধা দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানা অসুস্থতা দেখা দেয়। কোষ বিভাজনও ঠিক মত হতে দেয়না।”
আমাদের অন্ত্রের সঙ্গে মেজাজ যুক্ত থাকার পেছনে একটি সাধারণ কারণ হল, আমাদের পরিপাকতন্ত্রে আনুমানিক ৮০% থেকে ৯০% সেরোটোনিন উৎপন্ন হয়।সেরোটোনিন এক ধরণের রাসায়নিক বার্তাবাহক,যার সঙ্গে আমাদের পরিপাক ক্রিয়া থেকে শুরু করে মানসিক রোগ সংক্রান্ত শরীরের নানা কার্যক্রম জড়িত।এক কথায় সেরোটোনিনের নি:সরণের ওপর নির্ভর করে আমাদের মেজাজ ভাল থাকা, না থাকা।দীর্ঘমেয়াদী চাপ শরীরে সেরোটোনিন নি:সরণের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে যা আমাদের মন মেজাজ, উদ্বেগের মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে।
ডাঃ আর্টিস বলেছেন, “অন্ত্র এবং মস্তিষ্কের অক্ষ মানুষের জীবনের প্রতিটি দিন কে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ, মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভর করছে এই অক্ষের উপর।”
মাইক্রোবায়োটা অন্ত্রের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন।আমরা এন্টিবায়োটিক খেয়ে খেয়ে এন্টিবডি বানাচ্ছিনা আসলে মাইক্রোবায়োটা হ্রাস করে দিচ্ছি । আর মাইক্রোবায়োটা হ্রাস পেলে শুধুমাত্র অন্ত্রের জন্য ক্ষতি নয়, মস্তিষ্কের জন্য ও হুমকিস্বরূপ।
Original story by Weill Cornell Medicine and posted on Technology Network
chu, C. (2019). The microbiota regulate neuronal function and fear extinction learning. Nature, 543–548,574.