স্বাস্থ্য অধিপ্তরের সবশেষ তথ্যমতে, সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল মিলে এখনো অন্তঃবিভাগে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা ৫৯৪০ জন।[1] গত ১৮ বছরের হিসাব বলছে এ বছরের আগে কখনই বছর জুড়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়ায়নি। সেখানে এবছরের শুধুমাত্র জুলাই মাসেই ১৩ হাজার ১৮২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ এই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন।[2] যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) তথ্যমতে, বিশ্বে এর প্রকট আরো ভয়াবহ। প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকায় বসবাস করে। এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, আমেরিকাসহ আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের প্রায় ১০০টি দেশে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। বছরে প্রায় ১০ কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কমপক্ষে ২২ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে।[3]
এডিস হলুদ জ্বর, জিকা ভাইরাস ও চিকুনগুনিয়ার কারণ। চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ আমরা ২০১৭ তে দেখেছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার মতে, এই রোগে মৃত্যু ঝুঁকি প্রতি দশ হাজারে এক জন বা এর চেয়েও কম তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই রোগের জটিলতা তুলনামূলক বেশি হয়।[4] তবে, আক্রান্ত ব্যক্তির প্রচন্ড ব্যথা অনেক বছর ধরে থেকে যায়। জিকা ভাইরাস বা জ্বরের বিপত্তি হচ্ছে, ৬০-৮০% সময়ে এর উপসর্গ দেখা যায় না।[5] একইসাথে, গর্ভধারিণী মা-কে কামড়ালে তার সংক্রমণ বাচ্চার মাঝেও ছড়াতে পারে।[6] শারীরিক সম্পর্ক এবং রক্তের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।[7] ২০১৫ সালে ব্রাজিলে এর মহামারী শুরু হওয়ায় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।[8] হলুদ জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর হার বেশি। শুধু ২০১৩-তে ১ লক্ষ ২৭ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়। এর মাঝে ৪৫ হাজার মানুষ মারা যায়।[9] বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থ্যা ৪৭ টি দেশকে হলুদ জ্বরের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এসকল দেশ আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত।[10]
এদিকে এডিসে আক্রান্ত এসকল রোগের কোন আলাদা ঔষধ বা চিকিৎসা নেই।[11] সাধারণ জ্বরের মতো নিরাময় ব্যবস্থা। তাই বিশেষজ্ঞরা জ্বর নিরাময়ের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে বলেন। এবং এডিস প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে গুরুত্ব দেন। তাই কেবল ডেঙ্গু নয় বরং এডিসের বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রয়োজন। ডাক্তার যেমন এডিসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিবে, ঠিক তেমনি আমরা সকলে মিলে সচেতন হলে এডিস প্রতিরোধ হবে।
এডিসের পরিচয়
এডিস এক প্রকার মশা। এসব মশা ভাইরাস সংক্রমণ করে। এডিস মশার বিভিন্ন প্রজাতি থাকলেও দুপ্রকার মশা কামড়ের মাধ্যমে রক্তে ভাইরাস প্রদান করে। ‘এজেপ্টি’ এবং ‘অ্যালবোপিকটাস’ প্রজাতির মশা ডেঙ্গু জ্বর, হলুদ জ্বর, ওয়েস্ট নাইল জ্বর, চিকুনগুনিয়া রোগের কারণ। এছাড়াও এসব মশার কামড়ে মস্তিষ্কেও অন্য অনেক রোগের সংক্রমণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এনকেফালাইটিস ভাইরাস সংক্রমণ হয় যার ফলে মৃত্যু কারণ হতে পারে।[12] নারী এডিস মশা মূলত ভাইরাস বহন করে এবং রক্ত শুষে নেওয়ার সময় সংক্রমণ ছড়ায়।[13]
এডিস এজিপ্টি মশার উৎপত্তি আজ থেকে প্রায় ৬০০ বছর পূর্বে। পশ্চিম আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া এই মশা দাস বানিজ্যের মধ্য দিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমায়। উনিশ শতকে এসে এশিয় অঞ্চলে (১৮৭০) এবং অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলে (১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে) এ প্রজাতির মশা ছড়িয়ে যায়।[14] ২০১৬ সালে এডিস এজিপ্টিকে “বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক প্রাণী” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।[15]
এডিসের বৈশিষ্ট
এডিস মশা দেখতে সাধারণ মশা থেকে ভিন্ন। তাদের দেহে ও পায়ে কালো এবং সাদা চিহ্ন রয়েছে। অন্যান্য মশার মতো নয় এডিস মশা, এগুলি কেবল দিনের বেলায় কামড়ায়। বেশি কামড়ায় খুব ভোরে এবং সন্ধ্যা হওয়ার আগে ও সন্ধ্যায়।[16] এসকল মশাকে ইন্টেলেকচুয়াল মশা বলা যায়। এই মশাগুলো দুটো পর্বে রক্ত শুষে নেয়। প্রথমে প্রোবিং পর্ব, সেই সময় আর্থ্রোপড একটি রক্তনালী সন্ধান করে। এই সময়ে শরীরের হেমোস্টেসিস এবং ইনফ্লামেশন প্রতিরোধ করতে ত্বকের নীচে লালা বের করে। রক্তের প্লাটিলেট ভেঙে তার জন্য সুবিধা করে নেয়। একটি বিশেষ লালার মাধ্যমে ওই জায়গা অবশ করে নেয়। ফলে কেউ বুঝতে পারেনা। পরে রক্তনালী খুঁজতে থাকে, একবার কোনও রক্তনালীর সন্ধান পেলে রক্ত নেওয়া শুরু করে (ডাক্তার যেভাবে ভেন খুঁজে রক্ত টানে, সেরকম পদ্ধতি)। এবং পেট ভরা পর্যন্ত রক্ত খেয়ে থাকে। এসময় পেট ভরে গেলে তখন রক্তের সাথে থাকা পানি ফেলে দেয়। এতে মশা তুলনামূলক বেশি রক্ত খেতে পারে।[17] রক্ত নেওয়া শেষ হলে রক্তের সাথে মিশ্রিত লালা ত্বকে এলারজি সৃষ্টি করে। তখনই কেউ বুঝে যে মশা কামড়িয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে মশা উড়ে গেছে।
এডিসের প্রজনন
এডিসের জীবন চক্র খুব জটিল। এরা বিকাশের সাথে সাথে তাদের আকার এবং আবাস বদলায়। মহিলা মশারা সাধারণত জল রয়েছে এমন পাত্রে ডিম দেয়। এসকল পাত্র হচ্ছে টায়ার, বালতি, পাখির বাসা, পানির জার এবং ফুলের পাত্র ইত্যাদি যেখানে পানি জমতে পারে। ডিম থেকে মশার লার্ভা হয়। লার্ভা থেকে পিউপা। পরে তা প্রাপ্ত বয়স্ক এডিসে রুপান্তর হয়। লার্ভা মূলত জলজ। ফলে বৃষ্টির পর বা অন্যকোন পানি জমলে এদের সুবিধা হয়। তবে তাদের ডিম একবার পাড়া হয়ে গেলে তা শুকনো জায়গাতেও ধ্বংস হয়না। যেকোনো পরিস্থিতির সাথে মানাতে পারে। তবে, নতুন করে মশার ডিম কেবল পানিতেই হবে। ফলে, বর্ষাকালে এর প্রকোপ দেখা যায়।[18] এরা মানুষের পাশে বাড়ির ভিতরে থাকে। ওয়াড্রব, লন্ড্রির জায়গা, এবং আসবাবপত্রের নীচে ঠান্ডা ছায়াময় জায়গায় থাকে।[19] এডিস এজিপ্টি সমগ্র বিশ্বজুড়ে গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বাস করে, প্রধানত: 35 ° N এবং 35 ° S এর অক্ষাংশের মধ্যে যেখানে শীতের তাপমাত্রা 10 ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ঠাণ্ডা হয় না। যদিও কিছু মশা এই অক্ষাংশের আরও উত্তর বা দক্ষিণে ভ্রমণ করতে পারে তবে তারা বেশি শীতে বাঁচতে অক্ষম। যেহেতু এডিসের জন্য উষ্ণ জলবায়ুর প্রয়োজন। ফলে এরা সাধারণত 1000 মিটারের উচ্চতায় বাস করে না, যেখানে তাপমাত্রা বেশী শীতলিত। এরা সাধারণত তাদের পুরো জীবন যেখানে ডিম পারে তার আশেপাশে কাটায়।[20]
এডিস প্রতিরোধ
এডিস প্রতিরোধের একমাত্র উপায় এডিস ধ্বংস। যেহেতু এডিস ধ্বংসে নির্দিষ্ট ভেকসিন আবিস্কৃত হয়নি ফলে এডিস ধ্বংসের কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। এর মাঝে রয়েছে, কীটনাশক ব্যবহারে পরিবেশের যেন ক্ষতি না হয় তাই শিকারী ক্রাস্টাসিয়ানরা কোপপডস এবং মসকিউটোফিস এবং গোল্ডফিসহ বিভিন্ন জাতের মাছের বিস্তার। কারণ, এসকল মাছ মশার লার্ভা খায়। এছাড়াও ড্রাগনফ্লাই, ছোট জলজ কচ্ছপ এবং বিটল এডিসের লার্ভা ধ্বংসে ভুমিকা রাখতে পারে। নতুন কিছু রাসায়নিক, জৈবিক ও জেনেটিক পদ্ধতি বিকাশ করা হচ্ছে। সেসব মশার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে।[21] এসবের অনেককিছুই যেহেতু আবিস্কার হবে বা হচ্ছে, বা অনেককিছুই আমাদের সকলের পক্ষে সম্ভব না। ফলে, সকলের উচিৎ এডিস দেখা মাত্র মেরে ফেলা। এবং চারপাশে কোনভাবেই পানি জমতে না দেওয়া।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল মশা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে আলাদা সেল রেখেছে। সচেতনতার মাধ্যমে কিভাবে এডিস প্রতিরোধ সম্ভব সেবিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সাথে সবার সম্মিলিত সচেতনতায় এডিস প্রতিরোধ ও ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বয়স্ক মশা ধ্বংস, সঠিক নিরাময় পরিকল্পনা, লার্ভা ধ্বংসে বাড়তি পদক্ষেপ নিতে পারে। আর আমাদের পরিবার এবং প্রতিবেশীরা মিলে চারপাশ পরিস্কার রেখে মশা কমাতে পারি।
মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে করণীয়-[22]
১। কীটনাশক স্প্রে, ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবেশ বান্ধব কীটনাশক ব্যবহারেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে, গর্ভবতী নারী বা বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করায় এমন নারী থাকলে ডাক্তারের অনুমতি সাপেক্ষে ব্যবহার করতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে
প্রত্যেকের জন্য লক্ষণীয়
২। লম্বা জামা পড়তে হবে। শার্ট, প্যান্ট বা লম্বা জামা (যেসব- হাত ও পায়ের বেশিরভাগ অংশ ঢেকে রাখে) পড়তে হবে। সু, মোজা ইত্যাদি মশার কামড় থেকে বিরত রাখবে।
৩। ঘরে বাহিরে মশার ডিম পারা বন্ধ করতে হবে।
৪। ভ্রমনের ক্ষেত্রে বাড়তি সচেতনতা নিতে হবে (যেহেতু পরিবেশ পরিচিত না)।
৫। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ এবং মশা নিধনের সাথে সম্পৃক্তদের বিশেষ প্রশিক্ষণ, বাড়তি দায়বদ্ধতা ও প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
এছাড়াও বাড়তি সতর্কতা যেখানে প্রয়োজনঃ
১। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
২। পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট –এ। সাধারণত, পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট রাতে থাকার জায়গা থাকে অনেক নোংরা। কাদা পানি জমে থাকে। ফলে, সেখানে মশা জন্মে তা বাসে বা গাড়িতে আশ্রয় নিতে পারে। তাই সকালে গাড়ি বা বাস ছাড়ার আগে স্প্রে করে নিতে পারেন।
৩। অফিসে বা বাসায় স্প্রে ছাড়াও কয়েল ব্যবহার করুন। লম্বা সময় সুরক্ষা দিবে।
৪। বেশিরভাগ কীটনাশকই কড়া গন্ধ ফলে এসব ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাস্ক বা কাপড় দিয়ে নাক চেপে নিন। গন্ধ যেমন সমস্যা, ঠিক তেমনি এসব শ্বাসের সাথে মিশে ফুসফুস জনিত সমস্যা হতে পারে।
[1] http://www.dghs.gov.bd/images/docs/Notice/2019/dengue/25-08-19-Bulletin_Dengue.pdf
[2] https://www.thedailystar.net/bangla/শীর্ষ–খবর/২৪–ঘণ্টায়–আরও–১৬৪৯–জন–ডেঙ্গু–নিয়ে–হাসপাতালে–স্বাস্থ্য–অধিদপ্তর-117520
[3] https://www.cdc.gov/dengue/prevention/plan-for-travel.html
[4] Mavalankar D, Shastri P, Bandyopadhyay T, Parmar J, Ramani KV (২০০৮)। “Increased Mortality Rate Associated with Chikungunya Epidemic, Ahmedabad, India”। Emerging Infectious Diseases (ইংরেজি ভাষায়)। 14 (3): 412–5। doi:10.3201/eid1403.070720। PMID 18325255
[5] “Factsheet for health professionals”। ecdc.europa.eu
[6] “Zika virus”। WHO & “Factsheet for health professionals”। ecdc.europa.eu
[7] Chen, LH; Hamer, DH (2 February 2016)। “Zika Virus: Rapid Spread in the Western Hemisphere.”। Annals of internal medicine।
[8] “WHO Director-General summarizes the outcome of the Emergency Committee regarding clusters of microcephaly and Guillain-Barré syndrome”
[9] “Yellow fever Fact sheet N°100”. World Health Organization. May 2013. Archived from the original on 19 February 2014. Retrieved 23 February 2014.
[10] World Health Organization. Vaccines and vaccination against yellow fever. WHO position paper — June 2013. Wkly Epidemiol Rec. 2013;88(27):269–83.
[11] Yellow Fever | Who | Regional Office For Africa
[12] “Archived copy”. Archived from the original on 2016-01-26. Retrieved 2016-01-26.
[13] https://www.who.int/denguecontrol/mosquito
[14] Andrea Gloria-Sorias research works | Yale University, CT …
[15] Powell JR. 2016. New contender for most lethal animal. Nature 540: 525. [Google Scholar]
[16] http://www.who.int/denguecontrol/faq/en/index5.html
[17] Choumet V, Attout T, Chartier L, Khun H, Sautereau J, Robbe-Vincent A, et al. (2012) Visualizing Non Infectious and Infectious Anopheles gambiae Blood Feedings in Naive and Saliva-Immunized Mice. PLoS ONE 7(12): e50464.
[18] Centers for Disease Control and Prevention. “Dengue.” Entomology and ecology (2010).
———. “Dengue.” Epidemiology (2010).
———. “Dengue.” Mosquito life cycle (2009).
[19] http://www.eliminatedengue.com/our-research/aedes-aegypti
[20] Dengue Virus Net. “Aedes aegypti.” Dengue transmission by Aedes aegypti mosquito (2011).
[21] https://www.nature.com/scitable/topicpage/controlling-dengue-outbreaks-22403714/
[22] https://www.cdc.gov/dengue/prevention/prevent-mosquito-bites.html
[23] Full Text Of “quarterly Journal Of Microscopical Science”https://www.travelvax.com.au/latest-news/bed-net-means-curtains-biting-bugs