Autistic শিশুর প্রধান চিকিৎসার আধার তার আপন আলোতেই

August ২০, ২০১৫

একটি গবেষণায় দেখা গেছে  অধিকাংশ অটিস্টিক শিশুর বাবা-মা উচ্চশিক্ষিত। গবেষণায় বলা হয়, ৪৩ শতাংশ অটিস্টক শিশুর মা এবং ৫২ শতাংশ তাদের স্বামীরা স্নাতকোত্তর বা উচ্চশিক্ষিত এবং তারা অবস্থা সম্পন্নও হয়ে থাকেন। তবে তাদের প্রতি চারজনের মধ্যে একজন মা হতাশায় ভোগেন – ICDDRB র অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এরকম গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। ICDDRB পরিচালিত এই গবেষণায় অটিস্টিকি শিশুর বাবা-মা মানসিক স্বাস্থ্যগত অবস্থা নির্ণয়ে সহযোগিতা করে Non Communicable Disease Line Director Health Service  স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।

২০১৫ সালের মে-জুন মাসে ঢাকায় ৩৮৮ জন মায়ের মধ্যে এই গবেষণা চালানো হয় যাদের ৩ বছর বয়সের অটিস্টিক শিশু আছে এবং তারা স্কুলে যায়। গবেষক দলটি তাদের পরিবারের আর্থ সামাজিক অবস্থা, মায়েদের সহযোগিতার অবস্থা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, অটিস্টিক শিশু সর্ম্পকে মায়েদের দক্ষতা এবং মায়েদের হতাশার বিষয় তুলে আনেন।

কি এই Autism spectrum disorder (ASD) অটিজম ?
সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে বুদ্ধিবৃত্তিক ও আচরণগত সীমাবদ্ধতার বিশেষ কিছু লক্ষনের সামস্টিক  নাম Autism । অটিজমে আক্রান্তদেরকে Autistic বলা হয়। অটিষ্টিক শিশুদেরকে কেউ কেউ Autism spectrum disorder (ASD) বা মানসিক প্রতিবন্ধী বলে থাকে। কথাবার্তায় পিছিয়ে থাকা , আত্নমগ্ন থাকা, অসংলগ্ন আচরণ করা – অটিজমের কিছু সাধারণ লক্ষণ। শিশুর বয়স ২/৩ থেকে শুরু করে এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অটিজমের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ এখনও জানা যায়নি; তবে জিনগত যোগসূত্র অনেকটা প্রতিষ্ঠিত। অটিজম কোনো মানসিক রোগ নয়, মস্তিষ্কের একটি বিকাশগত সমস্যা যেটা একটা শিশুর তিন বছরের মধ্যেই প্রকাশ পায়৷ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অটিস্টিক হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে৷

Autism Welfare Foundation এর প্রধান রওনক হাফিজের মতে, “অটিজম আক্রান্ত শিশুরা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বয়সের তুলনায় পিছিয়ে থাকে৷ একই ধরনের আচার-আচরণ তারা বারবার করে৷ তাঁর মতে, অটিজমের অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে বংশগত সমস্যা৷ এর বাইরে পরিবেশ দূষণ, রাসায়নিক মেশানো খাদ্যগ্রহণ – এসবও অটিজমের জন্য দায়ী৷”

অটিজম কিভাবে নির্নয় করবেন?
কিছু আচরণগত লক্ষণ দেখে অটিজম নির্ণয় করতে হয় :

১। যদি এক বছরের মধ্যেও শিশুটি মুখে কোনো আওয়াজ না করে বা ইশারা ও অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে কিছু না বোঝায় তাহলে তার অটিজম এর সম্ভাবনা
২। দেড় বছরের মধ্যে যদি এক শব্দের মিশ্রণে কোনো বাক্য না বলে তাহলে বুঝতে হবে তার মধ্যে অটিজম এর প্রভাব আছে।
৩।দুই বছরের মধ্যে যদি দুই শব্দের কোনো বাক্য না বলে তাহলে বুঝতে হবে তার মধ্যে অটিজম এর সম্ভাবনা আছে।
৪। তিন বছর বয়সের মধ্য যদি শিশুটির কথা বা আচরণ হঠাৎ পরিবর্তিত যায় তাহলে বুঝতে হবে তার অটিজমের শিকার হয়েছে।
৫। মনোযোগের সমস্যা
৬। বার বার শরীরের কোনো কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অস্বাভাবিক নাড়াচাড়া
৭। কোনো বিশেষ বস্তুর প্রতি অসাধারণ আসক্তি
৮। নিয়ম বা রুটিনের পরিবর্তনের ঘোর বিরোধিতা
৯। একই কাজ বার বার করার প্রবণতা
১০।শারীরিক বিপদ ও যন্ত্রণার ব্যাপারে আপাতদৃষ্টিতে অসংবেদনশীলতা
১১। ধ্বংসাত্মক, আক্রমণাত্মক বা আত্মঘাতী আচরণ।

অটিজম শিশুর আরও কিছু লক্ষণ আছে  – 
যদি শিশু তার নাম বা ডাকে সাড়া না দেয় বলতে বা বোঝাতে না পারে সে কি চায়, কথা বলতে দেরি হয়, কোনো কিছু করতে বললে তা না করে, কোনো কোনো সময় শুনতে পায়, আবার কোনো কোনো সময় শুনতে পায় না বলে মনে হয়, তার চাহিদা আঙুল দিয়ে দেখাতে বা বোঝাতে সক্ষম না হয়, হাত দিয়ে ‘বাই-বাই’ না করে, কিছুদিন আগেও বেশ কয়েকটা শব্দ বলতে পারতো, কিন্তু এখন তা না পারা, অন্যদের সঙ্গে হেসে খেলা না করে বা অন্যদের সঙ্গে খেলা করতে না পারা কেবল একা একা খেলতে পছন্দ করে, একেবারে স্বাধীনভাবে নিজের কাজ নিজে করে, আপনার চোখের দিকে তাকায় না, নিজেকে নিয়েই সারাদিন ব্যস্ত থাকে, অন্যদের ব্যাপারে কোনোই আগ্রহ থাকে না, মাঝে মাঝে অতিরিক্ত রেগে যায়, অস্বাভাবিক বেশি চঞ্চল মনে হয়, খেলনা দিয়ে কীভাবে খেলতে হয় তা জানে না, কোনো বিশেষ কিছু নিয়ে প্রচণ্ড জেদ করে, বার বার শরীরের কোনো কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অস্বাভাবিকভাবে নাড়াচাড়া করে, কোনো বিশেষ খেলনার প্রতি প্রচণ্ড আকর্ষণ অনুভব করে, বুড়ো আঙুলের ওপর ভর দিয়ে হাঁটে।

চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা –
কোন শিশু অটিজমে আক্রান্ত কিনা তাও খুব সহজে বলা যায় না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, “Most cases of autism, however, appear to be caused by a combination of autism risk genes and environmental factors influencing early brain development.” এর কোন প্রতিরোধক কিংবা প্রতিষধক নেই ঠিকই তবে প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে শিশুর ভবিষ্যৎ অনেকটা স্বনির্ভর করা সম্ভব হয়। অটিজম চিকিৎসায় ওষুধের উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা নেই৷ এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ৷ তবে প্রতিটি অটিস্টিক শিশুই আলাদা হওয়ায় তাদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারটি একজনের চেয়ে আরেকজনের চেয়ে আলাদা৷ অটিস্টিক শিশুর আচরণগত অস্বাভাবিকতা থাকায় পরিবারের অনেকের মনে বিরক্তির সৃষ্টি হতে পারে। ধৈর্য আর সংবেদনশীলতা নিয়ে শিশুটির স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে। অভিভাবকদের এ ব্যাপারে খুব সচেতন ও যত্নই পারে তাকে সুস্থ জীবন দিতে। এ ধরনের শিশুরাও অনেক ভালো ও গঠনমূলক কাজ করতে পারে। তাই পুরোপুরি হতাশ হওয়া যাবে না।

আরেক গবেষণায় একদল বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, “A woman can reduce her risk of having a child with autism by taking prenatal vitamins containing folic acid and/or eating a diet rich in folic acid (at least 600 mcg a day) during the months before and after conception.”

ডঃ রওনক হাফিজ বলেন, “যত আগে অটিজমের বিষয়টা উপলব্ধি করে চিকিৎসা শুরু করা যায় ততই ভাল৷ সঠিক পদ্ধতিতে এগোলে প্রতিটি অটিস্টিক শিশুই উন্নতি করে৷ এমনকি অনেকে সাধারণ স্কুলে যাওয়ার মতোও হয়ে ওঠে৷”

অটিজম এর উপর National Institutes of Health (NIH) এবং National Institute of Neurological Disorders and Stroke (NINDS) দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কিছু থেরাপি বিশ্বে সব জায়গায় মোটামুটি ফলো করা হয়, সেগুলো হল –

Educational/behavioral interventions:  Therapists use highly structured and intensive skill-oriented training sessions to help children develop social and language skills, such as Applied Behavioral Analysis.  Family counseling for the parents and siblings of children with an ASD often helps families cope with the particular challenges of living with a child with an ASD.

Medications:  Doctors may prescribe medications for treatment of specific autism-related symptoms, such as anxiety, depression, or obsessive-compulsive disorder.  Antipsychotic medications are used to treat severe behavioral problems.  Seizures can be treated with one or more anticonvulsant drugs.  Medication used to treat people with attention deficit disorder can be used effectively to help decrease impulsivity and hyperactivity.

Other therapies:  There are a number of controversial therapies or interventions available, but few, if any, are supported by scientific studies.  Parents should use caution before adopting any unproven treatments.  Although dietary interventions have been helpful in some children, parents should be careful that their child’s nutritional status is carefully followed.”

অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য কোন পরিসংখ্যান বা পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই৷ রাজধানী ঢাকায় এ নিয়ে কিছুটা সচেতনতা বা কথাবার্তা হলেও সারা দেশের চিত্র ভিন্ন। অনেক মা-বাবা শুরুতে বুঝতেই পারেননা যে তাদের শিশুটি অটিস্টিক৷ দেশের ১৪টি সরকারি হাসপাতালে শিশু মনোবিকাশ কেন্দ্র রয়েছে৷ কিন্তু আলাদাভাবে অটিজম নিয়ে কাজ করার কোন প্রতিষ্ঠান নেই৷ তাই তাদের সঠিক পরিচর্যা আর মানসিক বিকাশে সময়মত পর্যাপ্ত পরামর্শ পান না অভিবাকরা৷ অটিস্টিক শিশুদের জন্য ঢাকাসহ দু’একটি বড় বড় শহরে বেসরকারি পর্যায়ে কিছু স্কুল গড়ে উঠলেও তা অনেক ব্যয়বহুল৷

Tech Analyst – Techmorich