ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর কথা শুনলেই আমাদের মনে ভয় চলে আসে। এই এক ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে কত ধরণের রোগের সৃষ্টি করে, তাই ভীতি জন্মানোটাই স্বাভাবিক। তাই ব্যাকটেরিয়া কিংবা জীবাণুর আক্রমণের কথা শুনলেই আমাদের মন বিষিয়ে উঠে।
কিন্তু আপনি জানেন কি, এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের জীবন ধারণের জন্য কতটা অপরিহার্য, কিংবা তারা কতটা ভূমিকা রাখে মানুষের জীবন চক্রে। ব্যাকটেরিয়া যে আমাদের জন্য উপকারি এটা কম বেশি সবাই জানে, তবে কি সেই উপকার তা আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানিনা। এই আমরা আপনি, আমি সবাই মিলেই।
সব জিনিসেরই একটা ভাল দিক এবং একটা খারাপ দিক থাকে। এটা ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রেও সত্যি। সকল ব্যাকটেরিয়া পৃথিবীতে কোন না কোন একটা কাজের জন্য প্রয়োজনীয়। হয়ত যে ব্যাকটেরিয়া মানুষের জন্য ক্ষতিকর, তা অন্য কোন মানুষ, কিংবা জীব এর জন্য উপকারী।
আর এমন একটি উপকারি ব্যাকটেরিয়া হল গাট ব্যাকটেরিয়া। এই গাট ব্যাকটেরিয়া আসলে কোনো একটি বিশেষ ব্যাকটেরিয়া কিংবা জীবাণু না। এ হলো অসংখ্য প্রজাতির অগণিত ব্যাকটেরিয়ার সমষ্টি, যা মানুষের শরীরের ভিতর বসবাস করে। শুধু মানুষের শরীর ই নয়, অন্য সকল প্রানী এমনকি কীটপতঙ্গ এর পরিপাক তন্ত্রের মধ্যে এদের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে থেকে আমাদের পরিপাক প্রণালিতে এক বিরাট প্রভাবক হিসেবএ কাজ করে। গাট ব্যাকটেরিয়াকে পুরোপুরিভাবে আমাদের শরীরের জন্য উপকারি ব্যাকটেরিয়া বলা না গেলেও এদের সাথে আমাদের এক অপরিহার্য পরিপূরক সম্পর্ক বিদ্যমান। আমাদের শরীরে গাট ব্যাকটেরিয়ার অতিরিক্ত উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতি দেখা গেলে তা আমাদের স্বাস্থ্যে বিরাট প্রভাব ফেলে।
গাট ব্যাকটেরিয়া – উপসর্গ ও কারণ
১। শরীরে গাট ব্যাকটেরিয়ার অসামঞ্জস্য দেখা গেলে পরিপাক ক্রিয়ার সমস্যা দেখা দেয়। আর ফলশ্রুতিতে পেটে গ্যাস সৃষ্টি হওয়া, বমি, ডায়েরিয়া সহ অন্যান্য পরিপাক সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২। শারীরিক এই সমস্যা আমাদের মানসিক অবস্থার উপরও প্রভাব ফেলে। গাট ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হলে তা বিষণ্ণতা সৃষ্টির পাশাপাশি মনে ভীতিরও সঞ্চার করতে পারে।
৩। গাট ব্যাকটেরিয়া সমূহের মধ্যে কিছু প্রজাতি আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি, কে, বি১২, বি১৭ ছাড়া ম্যাগনেসিয়াম সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান তৈরি করে। শরীরে এই প্রজাতি গুলোর স্বল্পতা দেখা দিলে শরীরে এর বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়। এর ফলে এইসব উপাদানের স্বল্পতা সংক্রান্ত রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এর মানে এই দাঁড়ায় যে আপনার গাট স্বাস্থ্যকর নয়। এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
৪। আমাদের শরীরে বিধ্যমান ব্যাকটেরিয়া, এনজাইম সহ অন্য সকল জীবাণু মিলেই আমাদের শরীরে এন্টিবডি তৈরি করে। কিন্তু যখন আমাদের শরীরের এন্টিবডি কোন রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়না তখন আমাদের এন্টিবায়োটিক এর প্রয়োজন পড়ি। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াসৃষ্ট রোগে আমরা এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করে থাকি। তবে এই এন্টিবায়োটিক আমাদের শরীরে রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর জীবাণুগুলো ধ্বংসের পাশাপাশি কিছু উপকারী জীবাণুও ধ্বংস করে। এবং পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, এন্টিবায়োটিক এর কারণে যেসব উপকারী জীবাণু ধ্বংস হয় তা নিজে নিজে আবার প্রতিস্থাপিত হতে পারেনা। অতএব, অযথা এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন করা থেকে বিরত থাকুন।
৫। প্রাত্যহিক জীবনে আমাদের প্রচুর ধকল সহ্য করতে হয়। এই ধকলগুলো আমাদের শরীর এবং মনকে অস্থিতিশীল করে তোলে, যার ফলে আমরা মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ি, এছাড়াও বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় সমস্যা যেমন অতিরিক্ত রক্তচাপ, আমাশয় ইত্যাদি দেখা দেয়। শরীরের উপর এই চাপ আমাদের পরিপাকতন্ত্রের এই গাটকেও ক্ষতিগ্রস্থ কর। তাই অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত খেলাধুলা, ঘুরাঘুরি সহ অন্যান্য বিনোদনের মাধ্যম খুজে নিন।
৬। ত্বক আমাদের শরীরের এক অপরিহার্য অংশ, যা আমাদের অঙ্গসমূহকে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের সৌন্দর্য্যও বৃদ্ধি করে। তাই মোটামুটি অধিকাংশ মানুষই তার ত্বক নিয়ে অনেক সচেতন থাকে। কিন্তু তারপরও ত্বক নিয়ে আমাদের নানারকম সমস্যায় ভুগতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় ত্বক নিয়ে অনেক বেশি খুঁতখুঁতে এবং নিয়ম মেনে চলার পরও বিভিন্ন ত্বকের সমস্যায় ভুগতে হয়। কারণ, শুধুমাত্র ত্বক সচেতন হলেই সুন্দর এবং পরিপক্ক ত্বক পাওয়া সম্ভব নয়। অনেক সময় শরীরের ভিতরের অন্যান্য সমস্যা ত্বকের প্রভাব ফেলে। গাট ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহানিতাও এই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে। সোরেসিস, একজিমা, একনি সহ আরো কিছু সমস্যা গাট ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্টি করে।
গাট ব্যাকটেরিয়ার সাথে আমাদের শরীরের এক অপূরণীয় সম্পর্ক বিদ্যমান, যার পরিপূরক বিজ্ঞান এখনো খুজে পাইনি। আর সুসাস্থ্যের জন্য গাট ব্যাকটেরিয়ার কোন বিকল্প নাই। আজ এতটুকুই। পরবর্তীতে আমরা সুসাস্থ্যের জন্য গাট ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা এবং পরিমিত গাট ব্যাকটেরিয়ার স্তর পেতে আমাদের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করবো।
Azad Likhon
Tech Writer