World Health Organization (WHO) এর হিসাবে, প্রতিবছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ। এতে প্রাণহানি ঘটে প্রায় ২২ হাজার জনের, যাদের অধিকাংশই শিশু। এই ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণ রোধে এবার জিনগত সূত্র আবিষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বের শতাধিক দেশে ২.৫ বিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু হেমোরাজিক ফিভার তথা ডিএইচএফ নামক এই জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সংস্থাটি বলছে, ১৯৭০ সালের পূর্বে মাত্র ৯টি দেশে এই জ্বরের সংক্রমণ ছিল। অথচ ১৯৭০ সালের পর থেকে এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে চারগুণ হারে। আর এই হার এখনও অব্যাহত রয়েছে।
ডেঙ্গু নামক এই ভাইরাস লালিত হয় মানুষের দেহেই। আর এই ভাইরাসটি একজনের শরীর থেকে অন্যের শরীরে সংক্রমণের দায়িত্ব পালন করে এডিস মশা। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু ১, ২, ৩ এবং ৪ – এই চারটি ধরণ আবিষ্কার হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যবেক্ষণে জানা যায়, এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সিঙ্গাপুরে। গত সাত বছরে সেখানকার প্রায় ৫০ লাখ মানুষের দেহে ডেঙ্গু ১ এবং ২ – এই দু’ ধরণের ডেঙ্গু দেখা দিয়েছে। আর চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে Scientist রা লক্ষ্য করছেন ৩ এবং ৪ – এই দু’টি জাতের ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশী দেখা যাচ্ছে।
ডেঙ্গু কি?
Dengue fever যা Breakbone fever নামেও পরিচিত। এটা mosquito-borne tropical disease সংক্রামক এর কারণে হয়। যে উপসর্গগুলি দেখা যায় তার মধ্যে আছে fever, headache, muscle, joint pains, এবং characteristic skin rash যা হামজ্বরের সমতুল্য। স্বল্প ক্ষেত্রে অসুখটি প্রাণঘাতী ডেঙ্গু hemorrhagic fever এ পর্যবসিত হয়। এর ফলে শরীরে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় সেগুলো হল – রক্তপাত, রক্ত অনুচক্রিকার কম মাত্রা এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ অথবা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম দেখা হয়, যেখানে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কম থাকে।
ডেঙ্গু এডিস এর বিভিন্ন প্রকার মশা দ্বারা পরিবাহিত হয়। প্রধানতঃ Genus Aedes ভাইরাসটির চারটি প্রকার আছে। একটি প্রকারের সংক্রমণ সাধারণতঃ জীবনভর সেই প্রকারে প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়। অন্য প্রকারগুলিতে শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদী প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়। অন্য প্রকারের পরবর্তী সংক্রমণ প্রবল জটিলতার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। যেহেতু ডেঙ্গুর কোন ভ্যাকসিন নেই, মশার সংখ্যা বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ ও মশার সংখ্যাবৃদ্ধি হ্রাস এবং মশার কামড়ের সম্ভাবনা কমানোর মাধ্যমে প্রতিরোধ করার একমাত্র উপায়।
Acute ডেঙ্গুর চিকিৎসা শায়ক প্রকৃতির। স্বল্প বা মাঝারী অবস্থার ক্ষেত্রে মুখে rehydration বা intravenous পদ্ধতিতে ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড প্রয়োগ করা হয়। অবস্থা প্রবল হলে blood transfusion এর মাধ্যমে এর চিকিৎসা করতে হয়। ১৯৬০ সালের পর থেকে ডেঙ্গু জ্বরের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। প্রতি বছর প্রায় ৫০-১০০ মিলিয়ন লোক এতে আক্রান্ত হয়। ১৭৭৯ সালে এর প্রথম আলামত পাওয়া যায়। ভাইরাসঘটিত কারণ এবং সংক্রমণ বিষয়ে বিশদে জানা যায় বিংশ শতকের প্রথম ভাগে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময় থেকে ডেঙ্গু গোটা পৃথিবীতে মারাক্তক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তার মধ্যে ১১০ টিরও বেশি দেশে মহামারীর আকার নেয়। মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা ছাড়াও ভ্যাকসিনের ওপর কাজ চলতে থাকে আর তার সাথে ওষুধ প্রয়োগ করা হয় সরাসরি ভাইরাসের ওপর।
ডেঙ্গুর উপসর্গ এবং লক্ষণ –
সাধারণত ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্তদের প্রথমেই দেখে বোঝা যায় না। তাদের মধ্যে ৮0% উপসর্গহীন অথবা সাধারণ জ্বরের মত সামান্য উপসর্গ দেখা দায়। বাকিদের মধ্যে জটিল আকার ধারন করে (৫%), এবং স্বল্প অনুপাতে প্রাণঘাতী হয়। Incubation period স্থায়ী হয় ৩-১৪ দিন (উপসর্গসমূহের সূত্রপাত থেকে রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের মধ্যবর্তী সময়)। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা হয় ৪-৭ দিন। আক্রান্ত এলাকা-ফেরত মানুষগুলোর ঘরে ফেরার ১৪ দিনের বেশি পরে জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ শুরু হয়। বাচ্চাদের প্রায়ই এই উপসর্গগুলি হয় যা সাধারণ সর্দি এবং গ্যাস্ট্রোএন্টারাটাইটিস (বমি ও ডায়েরিয়া)র সমান। আর সাধারণতঃ বড়দের উপসর্গের তীব্রতা কম হলেও কিন্তু রোগের জটিলতার শিকার বেশি পরিমাণে হয়।
সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ ভারতে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ভারতের কলকাতা শহরে প্রথম ডেঙ্গু হেমোরাজিক রোগ ধরা পড়েছিল ১৯৬৩ সালে। তবে ১৯৯৬ সালে ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ঐ বছর সারা দেশে ১০ হাজার ২৫২ জনের ধরা পড়ে ডেঙ্গু। তাতে প্রাণ হারায় ৪২৩ জন। এরপর থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। WHO (ডাব্লিউএইচও)’র হিসাবে ভারতে গত দশ বছরে ডেঙ্গু জ্বরে মারা যাওয়ার হার ১ শতাংশেরও বেশি।
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর সাম্প্রতিক অবস্থা –
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট International Centre for Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh (ICDDR,B) এর হিসেব অনুযায়ী আগস্ট মাসে রাজধানী এবং আশেপাশে ডেঙ্গু রোগে মোট ৭২৭জন আক্রান্ত হয়েছে। আর এ মাসে এখন পর্যন্ত প্রায় ছয়শো’র মত রোগী ঢাকার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু গবেষণা বিভাগের তথ্য মতে, “এবার রক্তপাত সহ ডেঙ্গু হচ্ছে যা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায় চার ধরনের ভাইরাস এর মধ্যে নতুন সেরোটাইপ পাওয়া যাচ্ছে আর সেটা হলো ডেঙ্গু-১”। ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার জন্যে সুনির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই বলে এটা একটা বিরাট সমস্যা। জ্বর হলে জ্বরের ঔষধ দিতে হবে। তাই চিকিৎসার ক্ষেত্রে তেমন কোন বড় রকমের পার্থক্য নেই। এ সম্পর্কে ডাঃ হাবিবুল্লা বলেন, “এই রোগের সব চেয়ে বড় ঔষুধ হলো মানুষের সচেতনা। আর সেটি হতে হবে সকলের তরফ থেকে। বিশেষ করে সরকার তরফ থেকে বেশি।”
বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মো. শামীম হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, “ডেঙ্গু হচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত রোগ। এডিস অ্যাজিপ্টি মশা বহন করে এই ভাইরাস। এই মশা বদ্ধ পরিষ্কার পানিতে বংশ বিস্তার করে, যেমন টবের পানি, এসি থেকে নির্গত পানি কিংবা অল্প বৃষ্টির পানি।” তবে জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির কোন স্থান থেকে রক্তপাত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার এমনকি জরুরীবস্থায় হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছে International Centre for Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh (ICDDR,B) ।
Source – Wiki, WHO
Tech Analyst – Techmorich