মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA (National Aeronautics and Space Administration) জানিয়েছে মঙ্গলের মাটিতে লবনাক্ত পানির সন্ধান মিলেছে। মঙ্গলের বুকে অবস্থান করা নাসার রোবটযান Curiosity rover সেখানকার মাটির নমুনা পরীক্ষা করে এ তথ্য জানিয়েছে বলে দাবি করেছে নাসা। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১ টায় এক সংবাদ সম্মেলনে নাসা Mars Mystery Solved বা ‘মঙ্গলের রহস্য উন্মোচিত’ শিরোনামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। এ ঘোষণার ফলে বহুল প্রতিক্ষিত লাল এই গ্রহটিতে মানুষ যেতে পারবে—এমন আশা জোরালো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে নাসার সহযোগী প্রশাসক John Grassfiled বলেন, মঙ্গলে তরল লবণাক্ত পানির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে। জন গ্রাসফিল্ড নাসার টুইট করা পোস্টে আরো বলেন “মঙ্গলে আমরা পানিকে অনুসরণ করছিলাম, পৃথিবীর বাইরে প্রাণের সন্ধানে আমাদের যে অনুসন্ধান এটা তারই অংশ। এখন আমরা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নিয়ে বলতে পারি, আমরা যা ভেবেছিলাম, তাই পাচ্ছি। এখন প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, মঙ্গলে প্রবাহমান পানি আছে ।”
নাসার কৃত্রিম উপগ্রহ মঙ্গলের ‘Recurring Slope Lineae’ এর উপরের স্তরের যে ছবি পাঠিয়েছে, তা জমাট লবণের। এই লবণ মঙ্গলের হালকা বাতাসে থাকা পানির বরফ হওয়া কিংবা বাষ্পে পরিবর্তিত হওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে একে তরল আকারে প্রবাহিত করতে পারে।
নাসা জানিয়েছে, মঙ্গলে পানির অস্তিত্ব খনিজ আকারে রয়েছে। এতে রয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইড, অক্সিজেন ও সালফারের যৌগ। Prof Andrew Coates, head of planetary science at the Mullard Space Mullard Space Science Laboratory বলেন, এই প্রথম আমরা মঙ্গলে তরল পানি পাওয়ার এভিডেন্স পেয়েছি । এই আবিষ্কারের পর মঙ্গল গ্রহ যে একেবারেই ঠান্ডা ও শুষ্ক সে ধারণা থেকে সরে আসেন গবেষকেরা। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মঙ্গলের পৃষ্ঠে এক ধরনের লবণের অস্তিত্ব আছে যা তরল পানিকে ফ্রিজিং পয়েন্টের নিচে একটি অবস্থায় যেতে সাহায্য করে। মঙ্গলের স্বাভাবিক শীতের সময়ও এই পানির অস্তিত্ব থাকে না। এই পানি তখনই দেখা যায়, যখন মঙ্গলের তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রির বেশি থাকে। মঙ্গলের কিছু মাটি নিয়ে প্রায় ৮৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে উত্তপ্ত করলে তাতে মিশ্রিত অবস্থায় পানির অস্তিত্ব মেলে। গবেষকেরা মঙ্গলগ্রহের মেরু ও বেল্ট গ্লেসার অঞ্চলে হিমায়িত পানি থাকতে পারে বলে মনে করেন।
প্রায় ৩০০ কোটি বছর আগে বড় ধরনের জলবায়ু পরিবর্তনে সবকিছুতেই প্রভাব আছে। তবে JIm Green জানিয়েছেন, বর্তমানে আমাদের বোঝাপড়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। আমাদের রোভারগুলো মঙ্গলের বাতাসে ব্যাপক পরিমাণে আর্দ্রতার সন্ধান পাচ্ছে। গ্রহের পৃষ্ঠে রোভারের অনুসন্ধান বলছে, মঙ্গলের মাটিতে সিক্ততার পরিমাণ প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি। মূলত চিত্রে পাওয়া অপেক্ষাকৃত লম্বাটে কালো চিহ্নগুলোকে ঘিরেই একটি রহস্যের সূচনা হয়েছিল চার বছর আগে। বিজ্ঞানীরা তখন প্রমাণ করতে পারেননি এর পেছনে রহস্যটি আসলে কী? এ চিহ্নগুলো এক মৌসুমে (গরম) দেখা যায়, আবার শীতে হারিয়ে যায়। এ থেকে বিজ্ঞানীদের ধারণা হয়, গরমের সময় মাটির নিচ থেকে পানির স্তর ওপরে উঠে আসে এবং প্রবাহিত হয়। সে ছবিটিই ধরা পড়েছে উপগ্রহগুলোর ক্যামেরায়। এ কারণেই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, একটি আস্ত মহাসাগরও লুকিয়ে থাকতে পারে মঙ্গলের মাটির নিচে। এ গবেষণা নেতৃত্ব দিয়েছেন Planetary Science at Georgia Institute of Technology এর পিএইচডি স্টুডেন্ট Nepalese-American “lujendra ojha” এবং তার বৈজ্ঞানিক সহকর্মী Meri Beth William ।
২০১১ সালে প্রথম নাসার উপগ্রহ চিত্রে মঙ্গলে RSL ধরা পড়ে যা গ্রীষ্মকালে দেখা যায়। কিন্তু তাপমাত্রা কমলে মিলিয়ে যেতে শুরু করে। তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রির উপরে থাকলেও তা দেখা যায়। মহাকাশযান মার্স রোজন্যান্স অর্বিটারের পাঠানো মঙ্গলের “Chemical Map” বিশ্লেষণে নতুন একটি পদ্ধতি খুঁজে বের করেছেন Scientist রা। তারা দেখেছেন, মঙ্গলপৃষ্ঠে বিষুবীয় অঞ্চলের কয়েক স্থানে একমাত্র পানির উপস্থিতিতে আরএসএলে ওই লবণ জমে ।
CEO এবং co-founder of Explore Mars এর Chris Carberry জানিয়েছেন, পানির সন্ধান পাওয়া গেলে ভবিষ্যৎ নভোচারীদের পানি ও অক্সিজেনের উৎস হিসেবে তা কাজে লাগবে। এখানে পানি থাকার অর্থ সেখানে তাপের কোনো উৎস রয়েছে যা পানিকে তরল করে রাখে। পৃথিবীতে যেমন পানি ও তাপ থাকলে সেখানে প্রাণ থাকার শতভাগ সম্ভাবনা থাকে। মঙ্গলেও সে সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এর আগে নাসা আরো দাবি করে, এক সময় মঙ্গলের এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চল পানিতে ঢাকা ছিল। যা থেকে তারা দাবি করেন, যেহেতু পানির অস্তিত্ব ছিল সেখানে, সেহেতু প্রাণের অস্তিত্বও ছিল এবং হয়তো এখনো আছে বা ভবিষ্যতে থাকবে।
তবে নাসা এও জানিয়েছে যে, পানির সন্ধান মিললেও মঙ্গলগ্রহ এখনও মানুষের বসবাসের জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত নয়।
https://www.youtube.com/watch?v=m7ocLepoxzY
Tech Ninja – Techmorich