আপনার শিশু পর্নগ্রাফি থেকে নিরাপদ আছে তো?

October ৩, ২০১৬

প্রজুক্তির আশীর্বাদে যেমন উত্তর উত্তর উন্নতির চরম শেখরে বিচরন করছে আমাদের জীবন যাত্রার মান, তেমনি অজ্ঞতা আর অদক্ষতার কারনে অগোচরে প্রতিনিয়ত অনেক ভয়ঙ্কর ক্ষতিসাধনও হয়ে চলেছে ভেতরে ভেতরে। সম্প্রতি এর সবচেয়ে ভয়াবহ যে দিকটি উঠে এসেছে, তা হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রত্ত্যক্ষভাবে নানা অনৈতিক ছবি আর পর্নগ্রাফির শিকার হচ্ছে আমাদের শিশুরা।

বেসরকারি একটি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ২০১২ সালের এক জরিপে তথ্য প্রদান করেছে যে ঢাকায় স্কুলগামী শিশুদের প্রায় ৭৭ ভাগ পর্নোগ্রাফি দেখে। প্রশ্ন হচ্ছে, শিশুরা কেন পর্নোগ্রাফিতে ঝুঁকছে? মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, “বাণিজ্যিকভাবে তৈরি পর্নোগ্রাফির চেয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে ঘিরে তৈরি পর্নো ভিডিও মানুষ বেশি দেখছে যেখানে এই ভিডিওগুলোতে ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশী।”

বিষয়টি পর্যালোচনা করতে গিয়ে ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “পর্নোগ্রাফি শিশুদের কাছে সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মায়ের কিনে দেওয়া স্মার্টফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপের ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে শিশুরা এই অন্ধকার জগতের দিকে অজান্তেই পা বাড়াচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মূলত সুস্থ যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ে রাখঢাক প্রবণতার বিষয়টিকে শিশুদের কাছে অস্বাভাবিক করে তুলছে। যৌন স্বাস্থ্য জীবনের স্বাভাবিক অংশ হলেও এ নিয়ে জানার পথ বন্ধ থাকায় শিশুরা অস্বাভাবিক বা বিকৃত পথে গিয়ে এ বিষয়ে ভুল ধারণা পাচ্ছে।”

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাহ এহসান হাবিব এ বিষয়গুলোর সঙ্গে শিশুদের জন্য খেলাধুলাসহ বিনোদনের সুযোগ না থাকার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “ঢাকায় শিশুদের খেলাধুলার জায়গা নেই বললেই চলে। তাছাড়া পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যাবস্থাও নেই। বাচ্চাদের জীবনটা চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী হয়ে পড়াতে হাতের কাছে ইন্টারনেট, গেম, সামাজিক মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে দ্রুত পর্নোগ্রাফির দিকে ডাইভার্ট হচ্ছে শিশুরা।”

আরো ভয়ের কথা হচ্ছে, পর্নোগ্রাফির জগতে শিশুরা ভোক্তা হওয়ার পাশাপাশি পণ্যেও পরিণত হচ্ছে। এ বিষয়টি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের প্রভাষক এস এম ইমরান হোসেন। তিনি মনে করেন, বন্ধুদের মধ্যে কেউ একজন হয়তো পর্নোগ্রাফি দেখল। তখন সে অন্য বন্ধুদেরও সেটা দেখায়। এভাবেই কোউতুহলবসত জিনিসটা বাকিদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছে।

আছে কি সমাধানের উপায় ?

বিশেষজ্ঞদের মতে কাউসেলিং এর কোন বিকল্প নেই। আর তার জন্য সন্তানদের প্রচুর পরিমান সময় দিতে হবে। তাদের সঙ্গে বাবা-মাকে বন্ধুর মতো মিশতে হবে এবং সব সময় দুরুত্ত যেন না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাকে একটু একটু বোঝাতে হবে তার ভালো-মন্দের বিষয়ে। একমাত্র বাবা-মায়ের দেওয়া নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা পারে শিশুকে এ ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে।

শিশুদের জন্য একটি সুন্দর শৈশব নিশ্চিত করা আমাদের সবার প্রধান একটি দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে পরিবার, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র—সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সবার আগে পর্নোগ্রাফির সহজপ্রাপ্যতা বন্ধ করতে হবে। পর্নোগ্রাফিযুক্ত সাইটগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি এর ওপর নিয়মিত মনিটরিংয়ের উদ্যোগও সরকারকে জোড়ালোভাবে নিতে হবে। বাবা-মায়ের প্রতি তাঁর পরামর্শ, শিশুরা ব্যবহার করছে এমন ডিভাইসে কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করে তারা সন্তানের বাজে সাইটে যাওয়ার পথ বন্ধ করতে পারেন।

সর্বপরি, স্কুলের পাঠ্য বইয়ে যৌন শিক্ষা সম্পর্কে যে অধ্যায়গুলো আছে, সেগুলো এড়িয়ে না গিয়ে সুন্দরভাবে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে। কারণ, এটি জীবনের একটি অংশ—এই বোধটি স্বাভাবিক পথে শিশুর কাছে না গেলে সে বিকৃত পথে পা বাড়াবেই। সচেতনা গড়ে তোলার মাধ্যমে আপনার শিশুকে পর্নগ্রাফির আসক্তি থেকে রক্ষা করার সময় এখনই!

Source – BD Times, Prothom Alo
Mehanz Nabin – Tech Writer