বাচ্চারা যা দেখে তা-ই শিখে। যা শুনে তা-ই বলে। কথাগুলো শুনেছিলাম একটু বড় হওয়ার পর। ভাবনার শুরু তখন থেকে। কেনইবা যা দেখবে তাই শিখবে। আর যা শুনবে তাই কেন মুখ দিয়ে বের হবে। ঘটনার কারণ তখন জানা না গেলেও সত্যতা ঠিক বুঝতে পেরেছিলাম। দেখতাম, বাচ্চারা নকল করার চেষ্টা করছে। যা বলছি তা বলার চেষ্টা করছে। কমিউনিকেশনের ছাত্র হিসেবে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখলাম তারও কয়েকবছর পর একটি থিওরি পড়লাম, সোশ্যাল লার্নিং থিওরি। এই থিওরির মধ্যে সকল ভাবনার উত্তর পেলাম। এবারের আলোচ্য বিষয় এই থিওরি নিয়েই।
আলোচনাটা একটা গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। ২০০৯ চলছে তখন। কাদের নামে আমার এক পরিচিত ভাই ছিল। তিনি একদিন একটা মজার গল্প শোনালেন। তার ভাগনির বয়স হবে তখন চার কি পাঁচ। একদিন ওকে জিজ্ঞেস করছে, মামনি বলো তো! প্লেন কি-করে? বললো, প্লেন আকাশে উড়ে। কাদের ভাই তখন বলে, কি বলো মামনি! প্লেন তো পানি তো চলে। এসব তোমায় কে শিখিয়েছে? পিচ্চি ভাগনি তখন কিছুক্ষণ ভাবলো- তারপর বললো, মামা প্লেন পানিতে চলে। আম্মু ভুল শিখিয়েছে। আম্মুকে এখনই ধরছি। তারপর, তার মাকে দৌড়ে যেয়ে বলছে, মা! প্লেন তো পানিতে চলে। তুমি তো কিছুই জানো না। ভুল শিখিয়েছো।
এই গল্পের মূল সারাংশ হচ্ছে, বাচ্চাদের যেকোনো বিষয়ে খুব সহজে অনুকূলে আনা যায়। যা বলা যায়, তাই সে বিশ্বাস করতে চেষ্টা করে। কারণ তখন এটেনশন পিরিয়ড থাকে বা কোয়েশ্চেনিয়র পিরিয়ড চলে। তারা প্রশ্ন করে জানতে চায়। কিন্তু তা বিশ্লেষণ বা সত্য-মিথ্যা যাচাই এর সক্ষম থাকে না। ফলে- তাদের বোকা বানানো সহজ। শেখানোও সহজ। আর এসময় বেশিরভাগই বাচ্চারা নিজ থেকে শিখে দেখে বা শুনে। আর এ কথাটিই বলছে- সোশ্যাল লার্নিং থিওরি।
মানুষ যা শিখে তা তার অভ্যাসের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করে। বাচ্চাদের বেলায় এটা পুরোপুরি প্রযোজ্য। আপনি ডান হাতে খান, ও তাই’ই করবে। আপনি চামচ দিয়ে খেলে তাই করবে। আপনার মতো কাশতে চাইবে, ঢং করতে চাইবে। ডাকতে চাইবে। মানে অনুকরণ করবে।[i] আলবার্ট বান্দুরা ১৯৭১ সালে এসে সোশ্যাল লার্নিং থিওরিতে একথাগুলো বলেন। যে বাচ্চারা সামাজিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠতে উঠতে শিখে। কখনো অবজারভেশন এর মাধ্যমে। কখনোবা, কেউ নির্দেশ করলে সেভাবে শিখে।[ii] এশিক্ষা গুলো তার স্টোর হয়। এরফলে, তার পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কনটেক্সটে সেসকল অভ্যাস দেখা যায়। এটাকে কগনিশন বলে। মূলত- মানুষ তার জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, ইন্দ্রিয় দ্বারা বুঝাপড়ার মধ্য দিয়ে শিখে। সেসব অনুযায়ীই পরবর্তীতে কাজ করে।[iii] মানুষ সামাজিকভাবে যা শিখে তা সোশ্যাল লার্নিং। আর এসব নিজের মাঝেই অটোমেটিক্যালি জমা হয়ে থাকা হচ্ছে কগনিশন। মানুষের আচরণ মূলত এই দুইয়ের সমষ্টি।
সোশ্যাল লার্নিং থিওরি পরিপক্কতা পায় ১৯৭৭ সালে এসে। তাত্ত্বিক বান্দুরা এসময়ে এসে বিহেভিওরাল লার্নিং থিওরির স্বপক্ষে যুক্তি প্রকাশ করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এই শিক্ষা পদ্ধতি কেবল শেখা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে না বরং তা অভ্যাসে পরিণত হয়।[iv] অভ্যাসে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে দুটি শেখার পদ্ধতি রয়েছে। ক্লাসিক্যাল কন্ডিশনিং এবং অপারেন্ট কন্ডিশনিং। ক্লাসিক্যাল কন্ডিশনিংকে পাভলোভিয়ান কন্ডিশনিংও বলা হয়। রাশিয়ান মনোবিজ্ঞানী এ ধারণার উন্মেষ ঘটান। মানুষ এবং প্রাণীর মাঝে অসম্ভব এক ক্ষমতা আছে। তাদের কোন কিছু গ্রহণের ক্ষমতা আছে। তার রেসপন্স করার ক্ষমতাও আছে। এই গ্রহণ এবং রেসপন্স এর মাঝে যে ধরণের সম্পর্ক তৈরি হয়, তা দিয়েই মানুষসহ সকল প্রাণী শিখে।[v] ওপারেন্ট কন্ডিশনিং এর ধারণা দেন তাত্ত্বিক বি. এফ. স্কিনার। তিনি বলেন, মানুষ কোনকিছু প্রাপ্তির আশায় বা শাস্তির ভয়ে মূলত শিখে থাকে।[vi] যেমন- পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলের ভয়ে বা ভালো ফলাফল হলে ভালবাসা, এটেনশন বা উপহার পেতে পারি এমন আশায় আমরা পড়ি। এই ধারণার জন্ম তাত্ত্বিক স্কিনার দেন। একটা সময় এই শিক্ষা প্রক্রিয়া অভ্যাসে পরিণত হয়। যেমন- বাচ্চাদের কোনকিছু কিনে দিবো বা খেলার সুযোগ দিবো বলে পড়াই। আবার বিড়াল এলো, পুলিশ ধরবে বলে খাওয়াই। মূলত তার মাঝে আগ্রহ তৈরি করতে চাই। যেন অভ্যাসে পরিণত হয় (ভয় দেখানোর পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা আছে। বেশিরভাগ সময় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে)। ফলে- ভয় না দেখিয়ে লাভ কি কি হতে পারে সেটা দিয়ে আগ্রহ জমানো। যেমন- পড়লে বা খেলে তোমার পছন্দের এই (শিশুর পছন্দনীয় কিছু, যা শিশুর জন্য ভালো) জিনিস দিবো।
শিশুরা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিখে যে, তার একটি এক্সপেরিমেন্ট করেছিলেন আলবার্ট বান্দুরা। ১৯৬১ সালের সেই এক্সপেরিমেন্টটি “বোবো ডল এক্সপেরিমেন্ট” নামে পরিচিত। তিনি দেখান, একটা শিশুর চারপাশে এমনসব বিষয় আছে যা তাকে প্রভাবিত করে। তার আচরণে পরিবর্তন ঘটায়। টেলিভিশন, বন্ধু-সহপাঠী, ক্লাসের শিক্ষক ও পরিবার। তাদের দেখে দেখে শিশুর মাঝে ছেলে-মেয়ে (লিঙ্গ[vii] ধারণা জন্ম নেয়। মূলত- এটা ছেলের, এটা মেয়ের জিনিস। এমন আচরণ ছেলে করবে, এমন করবে মেয়েরা। এসব সমাজ তৈরি পার্থক্য ওদের মাঝে তৈরি হয়) ধারণার জন্ম নেয়। তার মাঝে সামাজিক বা অসামাজিক বিষয় তৈরি হয়। শিশুরা এদের সবথেকে বেশি এটেনশন দেয়। এবং অনুকরণ করে।[viii] বিশেষত- লম্বা সময় টেলিভিশন দেখলে টেলিভিশনের বাচ্চা চরিত্রগুলো নিজেদের মাঝে ফুটিয়ে তুলতে চায়। ফলে- শিশুরা সহজেই কার্টুন পছন্দ করে। ডায়লগ মুখস্ত থাকে। ভাষা শিখে ফেলে। এমনকি, কোন চরিত্র ওর পছন্দ তাও বলতে পারে।
মূলত, বাচ্চারা এসব শিখে তিনভাবে। এক, কিছু মানুষকে তাদের মাঝে মডেল হিসেবে ভাবে। সাধারণত- বাবা, মা, পরিবার বা শিক্ষক। তাদের দেখে অনুকরণ করে। তাদের মতো করার চেষ্টা করে। দুই, ভারবাল নির্দেশ। সরাসরি কোন কাজের নির্দেশ করা। সেই কাজের লাভ ক্ষতি বোঝানো। তার থেকে শিশু সিদ্ধান্ত নেয়। তিন- সিম্বলিক। কোন চিহ্নের মধ্য দিয়ে শিশুর লার্নিং হয়। চিহ্ন কি! মিডিয়ার কিছু চরিত্রকে তারা গ্রহণ করে। তারা যে কাজ করে তা অনুকরণ করে। নায়ক বাহিরে কাজ করে, মানে তার মাঝে একটা জায়গা তৈরি হয়, নায়কের কাজই বাহিরে কাজ করা। নায়িকাকে বাঁচানো। এভাবে কোন ঘটনাকে সিম্বলিক ধরে নিজের মাঝে ব্যাখ্যা করা। এসব হতে পারে টেলিভিশন, মুভি, ইন্টারনেট দেখে। রেডিও শুনে সাহিত্যের কোন চরিত্র পড়ে তাদের মাঝে এমন অনুকরণীয় ভাবনা তৈরি হয়।
ঠিক কি ধরণের পর্যবেক্ষণে শিশুরা শিখে থাকে তা নিয়ে একটা সিরিজ রয়েছে। আলবার্ট বান্দুরা সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।[ix] প্রথমে- এটেনশন। একটা শিশু সে তার চারপাশে অনেককিছু দেখে। সব নেয় না। সে তাদেরটাই নেয়, যাদের সে মডেল হিসেবে গ্রহণ করে। আমরা দেখবো- বাচ্চারা সবার কোলে যেতে চায় না। সবাই ডাকলে শুনে না। ওরা কাছের মনে করে না সবাইকে। ফলে- তাদের থেকেই শিখবে যাদের ওরা নিজ থেকে গ্রহণ করে। এটেনশন দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বাচ্চারা সচেতনভাবে যাকে গ্রহণ করে তার প্রভাব বাচ্চার জীবনে বেশি থাকে।[x] দ্বিতীয়- রিটেনশন। বাচ্চারা যেহেতু অনেককিছু ভুলে যায় ফলে একই কাজ বারংবার দেখতে থাকলে তা করার ইচ্ছা জাগবে। যেমন- বাচ্চারা মার দিলেও ভুলেও যায়। কিন্তু বারংবার হলে তাকে ভয় পায়। আর যেতে চায় না। মানে- সরাসরি প্রভাব ফেলে তখন। তৃতীয়- রিপ্রডাকশন। এই অংশটুকু সহজ না। বান্দুরা বলেন, এর জন্য কগনিটিভ দক্ষতা ও সেন্সরিমটর সক্ষমতা থাকা জরুরি।[xi] কোনকিছু তৈরির ক্ষেত্রে কেবল দেখেই শেখা কঠিন। চতুর্থ- মোটিভেশন। বান্দুরা এর ব্যাখ্যা দেন এভাবে, পরিবেশ ও সামাজিক কোনকিছু থেকে মোটিভেশন তৈরি হয়। বিভিন্ন পরিবেশ বিভিন্ন ধরণের মোটিভেশন দিয়ে থাকে। মোটিভেশন কোনকিছু করার বা না করার হতে পারে। স্কুলে যাতায়াতে ময়লার দুর্গন্ধে মনে হলো, রাস্তায় আর ময়লা ফেলা যাবে না। আবার, ক্লাসে বন্ধুর পড়া পারায় সবার বাহবা মোটিভেট করছে তাকেও শিখতে বা পড়তে।
সোশ্যাল লার্নিং থিওরির কার্যকারিতা বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে বাড়ছে। ২০১১ এর গবেষণায় দেখা যায়, কালচারাল ইনটেলিজেন্স-এ এই থিওরির ব্যবহার হয়েছে।[xii] কালচারাল ইনটেলিজেন্স মনে করে, মানুষ কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস, দক্ষতা গ্রহণ করে। সাংস্কৃতিক যোগসাজশ এর মাধ্যমে তথ্য প্রবাহে এই লার্নিং হয়ে থাকে।[xiii] সোশ্যাল লার্নিং নিউরোসায়েন্স এর ক্ষেত্রেও সমানভাবে গুরুত্ব রাখে। নিউরোসায়েন্স বলে মিরর নিউরোন বলতে একটা ব্যাপার আছে। প্রাণীদের ভিতর একধরণের অনুপ্রেরণা জাগে, যখন দেখে অন্য কোন প্রাণী একই কাজ করছে। এটা নিউরোসাইকোলজির অংশ। যার মাঝে তিনটা বিষয় থাকে। অবজারভেশনাল লার্নিং, মোটর কগনিশন এবং সোশ্যাল কগনিশন।[xiv] মিরর নিউরোন ও মানুষের সোশ্যাল লার্নিং এর অনেকক্ষেত্রেই মিল রয়েছে।
এছাড়াও অপরাধবিজ্ঞানে এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অপরাধীর আচরণ, অপরাধের ধরণ, কারণ ও বেসিক সাইকোলজির অবস্থা বুঝতে এই সোশ্যাল লার্নিং থিওরির প্রয়োজন হয়। অপরাধীর আচরণ বিশ্লেষণ করতে সোশ্যাল লার্নিং উপর ভিত্তি করে “ডিফারেন্টশিয়াল এসোসিয়েশন থিওরি“ রয়েছে।[xv] “থিওরিজ অব ডেভলপমেন্ট সাইকোলজি” বইয়ে লেখক জেন্ডার-রোল তৈরির ক্ষেত্রে সোশ্যাল লার্নিং এর ভূমিকা বেশি বলে চিহ্নিত করেছেন।[xvi] ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও থিওরিটি প্রযোজ্য। আমাদের কখনো মোটিভেশন লাগে, কখনো দিতে হয়। মোটিভেশন তৈরি হয় বিশ্বাস থেকে। মূল্যবোধ এবং ফিডব্যাক থেকে। ধর্মীয় বিশ্বাস মানুষকে ধর্ম পালনে মোটিভেট করে। কিছু পেতে পারে এমন কোন আশা তাকে ওই কাজে মোটিভেট করবে। সুতরাং যেকোনো সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব মূল্যবোধ তৈরি করা যায়। প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশ্বাস জন্মানো গেলে তার ব্যবস্থাপনা ভালো হবে। ধর্মও নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান। সেটা দাঁড়িয়ে আছে এই তিন জিনিসের উপরেই।
এছাড়াও মিডিয়া বিষয়ক গবেষণায় দেখা গেছে, মিডিয়ার কন্টেন্ট কখনো ভায়োলেন্স শেখায়। বাচ্চারা যেহেতু ভালো মন্দের পার্থক্য করতে পারে না, তাই তারা প্রভাবিত হয়। বড় হলেও কখনো অন্যায়ের প্রক্রিয়া শিখে। সবাই তো- একভাবে কোন জিনিস নেয় না। এখানেও সোশ্যাল লার্নিং থিওরি প্রযোজ্য। বিশেষত- ভিডিও গেমস ভায়োলেন্স শেখায়। আক্রমণাত্মক মনোভাব তৈরি হতে পারে।[xvii][xviii]
এক্ষেত্রে-
স্কুল সাইকোলজি ঠিক করা জরুরী। স্কুলে শেখানোর প্রক্রিয়া, কিভাবে শেখায় তা শিশুর মাঝে
প্রভাব ফেলে। একটা জিনিস বারবার বলায় শিশুরা শিখে। আলোচনা, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কোনকিছু
করতে আগ্রহ পায়। বাচ্চারা শিক্ষককে গুরুত্বও দেয়। রিটেনশন, চর্চা হতে হতে পুরোপুরি
শিখে ফেলে।[xix] শিক্ষক
যদি সঠিক শিক্ষা দেয় তাহলে সেটার কার্যকারিতা ব্যাপক হয়। ফলাফল বেশি আসে।[xx] ফলে,
পরিবারও চায় আগামীর ভবিষ্যৎ গঠনের দায়িত্ব শিক্ষকের কাছেই থাক। তবে, এখানে পরিবারেরও
ভূমিকা পালন করতে হবে। একইসাথে, মিডিয়ার কন্টেন্ট তৈরিতে বেশ সচেতন থাকতে হবে।
–হামিমুর রহমান ওয়ালিউল্লাহ
[i] Albert Bandura (1971). “Social Learning Theory” (PDF). General Learning Corporation. Archived from the original (PDF) on 24 October 2013. Retrieved 25 December 2013.
[ii] Bandura, Albert (1963). Social learning and personality development. New York: Holt, Rinehart, and Winston.
[iii] “cognition – definition of cognition in English from the Oxford dictionary”. www.oxforddictionaries.com. Retrieved 2016-02-04.
[iv] Bandura, A. (1977). Social learning theory. Englewood Cliffs, NJ: Prentice Hall.
[v] Pavlov, I. P. (1897/1902). The work of the digestive glands. London: Griffin.
[vi] Skinner, B. F. (1938). The Behavior of organisms: An experimental analysis. New York: Appleton-Century.
[vii] Udry, J. Richard (November 1994). “The Nature of Gender” (PDF). Demography. 31 (4): 561–573.
[viii] Bandura, A. Ross, D., & Ross, S. A. (1961). Transmission of aggression through the imitation of aggressive models. Journal of Abnormal and Social Psychology, 63, 575-582
[ix] Bandura, A. (1972). “Modeling theory: Some traditions, trends, and disputes”. In Parke, R.D. (ed.). Recent trends in Social Learning Theory.
[x] Postman, Leo; Sassenrath, Julius (1961-07-01). “The Automatic Action of Verbal Rewards and Punishments”. The Journal of General Psychology. 65 (1): 109–136.
[xi] “Learning”. socrates.berkeley.edu. Retrieved 2017-03-30.
[xii] Schaik, Carel P. van; Burkart, Judith M. (2011-04-12). “Social learning and evolution: the cultural intelligence hypothesis”. Philosophical Transactions of the Royal Society of London B: Biological Sciences. 366 (1567): 1008–1016.
[xiii] Schaik, Carel P. van; Burkart, Judith M. (2011-04-12). “Social learning and evolution: the cultural intelligence hypothesis”. Philosophical Transactions of the Royal Society of London B: Biological Sciences. 366 (1567): 1008–1016.
[xiv] Uddin, L. Q.; Iacoboni, M.; Lange, C.; Keenan, J. P. (2007). “The self and social cognition: the role of cortical mid line structures and mirror neurons”. Trends in Cognitive Sciences. 11 (4): 153–157.
[xv] Burgess, R., & Akers, R. A Differential Association-Reinforcement Theory of Criminal Behavior. Social Problems, Vol. 14, No. 2 (Autumn, 1966), pp. 128-147
[xvi] Miller, Patricia H. (2011). Theories of developmental psychology. New York: Worth Publishers.
[xvii] Paik, H.; Comstock, G. (1994). “The effects of television violence on antisocial behavior: A meta-analysis”. Communication Research. 21 (4): 516–546.
[xviii] Anderson, C.A.; Bushman, B.J. (2001). “Effects of violent video games on aggressive behavior, aggressive cognition, aggressive affect, physiological arousal, and pro-social behavior: A meta-analytic review of the scientific literature”. Psychological Science. 12 (5): 353–359.
[xix] Kumpulainen, K., Wray, D. (2002). Classroom Interaction and Social Learning: From Theory to Practice. New York, NY: RoutledgeFalmer.
[xx] “Archived copy”. Archived from the original on 2014-03-21. Retrieved 2014-03-21.