টেকমরিচের আজকের অতিথি এ প্রজন্মের এমন একজন গুনী শিল্পী যার কাজগুলো খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে; সে হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ছাত্র প্রসূন হালদার। প্রসূনের গুণকীর্তন এক কথায় বলে শেষ করার মতো নয়। সে শুধু অসাধারন আকেই না, যারা কাছ থেকে তাকে চেনে সবাই জানে মানুষ হিসেবেও সে অনন্য । সৃষ্টিশীল বলেই হয়ত সবার থেকে একটু আলাদা। কিন্তু এত গুনী হয়েও নিরহংকার আর সহজেই মিশে যায় সবার মাঝে। শিল্পী জীবনের শুরুতেই ইতিমধ্যে তার অসংখ্য গুণগ্রাহী ভক্ত তৈরি হয়ে গেছে। প্রসূনের আঁকা ক্যারিক্যাচার, পোট্রেট, ল্যান্ডস্কেপ সব কিছুতেই খুজে পাওয়া যায় তার নিখুঁত শিল্পী মনের পরিচয়। চলুন প্রসূনের মুখেই শুনে নেয়া যাক তার শিল্পী হয়ে ওঠার গল্প।
নাম : প্রসূন হালদার।
জন্ম পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলায়। ছবি আঁকার প্রতি ভালবাসাটা বেশ পুরানো। ছোটবেলায় লিখতে শেখার আগেই আঁকতে শিখে গেছিলাম। যা দেখতাম তাই আঁকতাম। আমার সবচেয়ে বড় ক্যানভাস ছিল আমার বাসার মেঝে। চক দিয়ে মেঝের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত এঁকে যেতাম যা খুশি তাই। বাবা শিল্পী ছিলেন, বাবার কাজ গুলো দেখে কপি করার চেষ্টা করতাম ছোটবেলায়। তবে, ছোটবেলায়ই বাবা চলে যান, না ফেরার দেশে। আর তার পর থেকেই কমতে থাকে ছবি আঁকার পরিমান। আসলে কমে যায় বললে ভুল হবে আমিই কমিয়ে দেই, মাথার উপর বেশ চাপ ছিল। অল্প বয়সে বাবা মারা গেলে যা হয় আরকি। আর আমি ছিলাম পরিবারের বড়। তবে আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করতাম এটাই শেষ নয়। আমি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।
২০১৩ তে ঢাকায় আসি এবং শুধু মাত্র চারুকলায় পড়ার জন্য প্রস্তুতি নেই। ভাগ্য দেবীও সহায় হলেন। শুরু হল নতুন এক অধ্যায়। যার নাম, “চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়”। বর্তমানে আমি এখানের অঙ্কন ও চিত্রায়ন নিয়ে পড়ছি।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মূলত আমার একাডেমীক ড্রইং শুরু। আমি প্রতিদিন কাজ করতে ভালবাসি। হোক অল্প সময়, তবে সেটা অবশ্যই নিয়মিত। এখানে পড়ার সুবাদে দেশ বরেণ্য শিল্পীদের সহচার্য পাবার সূযোগ হয়েছে। তাছাড়া আমাদের ক্যাম্পাস কাজ করার জন্য আদর্শ জায়গা। আমি বিশ্বাস করি প্রকৃতিকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে ছবি আঁকার বিকল্প নেই।
আমি এও বিশ্বাস করি, দেখে দেখে হুবহু আঁকতে পারার মধ্যে সমস্ত শিল্পগুন নিহিত নেই। যদি তাই হয় তবে পৃথিবীর সব থেকে বড় শিল্পী একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা। শিল্পী দেখবে, ধারণ করবে এবং নিজের মতন করে প্রকাশ করবে। একটা ফটোকপি মেশিন আর একজন শিল্পীর কাজ কখনো এক হতে পারেনা। তবে হ্যা, ছাত্র অবস্থায় অবশ্যই হুবহু আঁকতে পারার অনুশীলন করতে হবে। মানে আগে জানো পরে সেটা প্রকাশ করো নিজের মতন করে।
ভালবাসি পেন্সিল। এটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় মাধ্যম। এছাড়া জলরং ভাল লাগে,তেলরঙও ভাল লাগে বেশ। ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করার চেস্টা করি। আসলে আমি মনে করি আঁকতে পারলে মিডিয়া কোনো ফ্যাক্টর না।
এত কিছু বলার পরে আসলে আমার জীবনের লক্ষ্য মনে হয়না কষ্ট করে বলতে হবে। “শিল্পী হতে চাই।” ব্যাস এই টুকুই।
এবার আসা যাক আমার কাজের ধরন নিয়ে কিছু কথায়। পোট্রেট, ল্যান্ডস্কেপ,হিউম্যান ফিগার এই তিনটি জিনিস আমার বেশ পছন্দের। এছাড়া যা দেখি তাই আঁকার চেষ্টা করি। ক্যারিকেচারের প্রতি ভালবাসা আছে ভীষণ। আসলে প্রতিদিনই নতুন কিছু শিখছি তাই নির্দিষ্ট করে কিছু বলাটা কঠিন। শেখার সময়টাকে সর্বোত্তম ভাবে ব্যাবহার করতে চাই আরকি।
আসলে আমাদের দেশে সেভাবে শিল্পের চর্চা না হবার পছনে বেশ কিছু কারণ আছে। তার মধ্যে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অন্যতম। পেটে ক্ষুধা থাকলে দুনিয়ার কোনো কিছুই ভাল লাগেনা। আর শিল্পী জীবন ভীষন অনিশ্চিত তাই চাইলেই বাবা মা তাদের সন্তানকে এ পেশায় আসতে দেয় না। আর আছে শিল্প সম্মন্ধে সঠিক শিক্ষার অভাব।
বাংলাদেশে শিল্প বা শিল্পীর উন্নতি সাধন করতে হলে আসলে সবার আগে যেটা করা দরকার তা হল শিল্পকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া, আর এ জন্য ঢাকা কেন্দ্রিকতা কমিয়ে দেশে সর্বত্র শিল্পকলাকে পৌঁছে দিতে হবে। যদিও কাজটা বলা যত সহজ করা তত সহজ না।
আমি নিজেই শিল্পের জগতে নতুন। তবে আমার থেকে ছোটদের শুধু এটুকুই বলতে পারি, “যদি ভাল মাটিও খুঁড়তে পারো তবে শুধু সেই কাজটা করে যাও, দেখবে একদিন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পুকুরটাই তুমি খুঁড়ে ফেলেছ। “
Tech Reporter – Techmorich