লক্ষ্য যখন বায়োকেমিস্ট হওয়া!

সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৫

আপনার গবেষণা ভালো লাগে? জীবনের রহস্য উদঘাটনের স্বপ্ন কি আপনাকে শিহরিত করে? অথবা জটিল কোন রোগের প্রতিষেধক আবিস্কার করে হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে চান? তাহলে আপনি পড়াশুনার জন্য বায়োকেমিস্ট্রি (Biochemistry) বা প্রাণরসায়ন বেঁছে নিতে পারেন।

প্রাণরসায়ন হলো বিজ্ঞানের এমন শাখা যেখানে জীব দেহে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রাণ-রাসায়নিক বিক্রিয়া (Biochemical Reaction) এবং বিভিন্ন প্রাণঅণু (Biomolecules) নিয়ে আলোচনা করা হয়। ভাইরাস, ব্যকটেরিয়া থেকে শুরু করে উদ্ভিদ, প্রাণী- মানে সকল জীবন্ত বস্তুই প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, লিপিড, নিউক্লিয়িক এসিড, এমাইনো এসিড ইত্যাদি প্রাণঅণু নিয়ে গঠিত। প্রাণরসায়ন অত্যন্ত ক্ষুদ্র পর্যায়ে (Molecular Level) এসব প্রাণঅনুর মধ্যে ঘটা বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া (Chemical Reaction), শক্তির রুপান্তর (Transformation of Energy), প্রাণঅনুসমূহের রুপান্তর (Conversion of Biomolecules), বিভিন্ন কোষ বা অনুসমূহের মধ্যে সঙ্কেত আদান-প্রদান (Signal Transduction or Cell signaling) ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে।

জীবনের রহস্য উদঘাটন থেকে শুরু করে রোগের প্রক্রিয়া, রোগের প্রতিষেধক আবিস্কার, বিবর্তন প্রক্রিয়া অনুসন্ধান, নতুন নতুন এন্টিবায়োটিক আবিস্কার, মস্তিস্কের গঠন এবং কাজ, বিভিন্ন রোগ নির্ণয় (Diseases Diagnosis), ফরেনসিক সায়েন্সে (Forensic Science) অপরাধী সনাক্ত করণ এবং কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে প্রাণরসায়ন বিস্তৃত হয়ে অনেকগুলো নতুন শাখা যেমন বায়োটেকনোলজি (Biotechnology), মলিকুলার বায়োলজি (Molecular Biology), জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Genetic Engineering), সেল বায়োলজি (Cell Biology), বায়োইনফরমেটিক্স (Bioinformatics) ইত্যাদির জন্ম দিয়েছে এবং এসব ক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তিসহ অন্যান্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয় ।

বায়োকেমিস্ট্রির আন্ডারগ্রাজুয়েট বা গ্রাজুয়েট পর্যায়ে সাধারণত যে বিষয়গুলো পড়ানো হয়- ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি (Physical Chemistry), অরগানিক কেমিস্ট্রি (Organic Chemistry), সেল বায়োলজি (Cell Biology), জেনেটিকস এন্ড ডিএনএ (Genetics & DNA), মলিকুলসমূহের (Molecules) গঠন এবং কাজ, বিভিন্ন বায়োকেমিক্যাল প্রক্রিয়া (Biochemical Reaction), নিউরোবায়োলজি (Neurobiology), প্রোটিন এন্ড মেমব্রেন (Protein & Membrane), এনজাইমোলজি (Enzymology), প্ল্যান্ট বায়োকেমিস্ট্রি (Plant Biochemistry), মাইক্রোবায়োলজি (Microbiology), ডিজিজ মেকানিজম (Diseases Mechanism), মেটাবলিজম (Metabolism), নিউট্রিশন (Nutrition), ফিজিওলজি (Physiology) ইত্যাদি।

বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক বা এ-লেভেল এর পর বিভিন্ন পাবলিক এবং কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রিতে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি গ্রহনের সুযোগ রয়েছে। বায়োকেমিস্ট্রি পড়ার জন্য বায়োলজি এবং কেমিস্ট্রিতে ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। এছাড়া কিছু গাণিতিক জ্ঞানেরও প্রয়োজন রয়েছে।

বাংলাদেশে বায়োকেমিস্ট্রিতে ক্যারিয়ার গড়ার চমৎকার সব সুযোগ রয়েছে। এই ক্ষেত্রে ভালো রেজাল্টধারীগণ বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণার সুযোগ লাভ করেন। দেশে-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বায়োকেমিস্টগণ বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে শিক্ষকতা, বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানি, বায়োটেকনোলজি কোম্পানি, ক্যামিক্যাল ইন্ড্রাস্টি, ফুড ইন্ড্রাস্টি, ফরেনসিক ল্যাব, হসপিটাল, ডায়াগনোস্টিক ল্যাব, কসমেটিক ইন্ড্রাস্টি ইত্যাদিতে কাজ করতে পারেন। এসবের বাহিরেও বায়োকেমিস্ট্রতে ডিগ্রিধারীগেণর জন্য বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বহুজাতিক কোম্পানি, ব্যবসা ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের সুযোগ রয়েছে।

Tech Analyst – Techmorich